সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য গোটা বাঙালি জাতিকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়েছে। ৪৭-এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভক্তির পর থেকেই উর্দু শাসকদের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাঙালির রক্ত সংগ্রামের চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে সেই ৪৮ সাল থেকে শুরু করে বায়ান্নর একুশে ফেব্র“য়ারির রক্তদান সংগ্রাম-আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে জাতির রায়, ৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা, ৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায়ই এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং স্বপ্নের স্বাধীনতা।
৭০-এর নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের পর বাঙালির স্বপ্নপুরুষ, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়েই আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে অর্জন করেন দেশ পরিচালনার ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করার যোগ্যতা।
৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- এই জগদ্বিখ্যাত ঘোষণার মধ্য দিয়েই মূলত বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে যায়। খুঁজে পায় গেরিলাযুদ্ধের গোপন কৌশল ও করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা। তার পরও ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধুর বিডিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর জাতিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার বার্তাই পরবর্তীকালে ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামেই ঘোষণা করেন, যা জাতিকে উজ্জীবিত করে। সমগ্র জাতি দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান বুকে ধারণ করে আত্মশক্তিতে বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিপাগল বাঙালির রক্তের বন্যায় ভেসে যায় পাকিস্তানের দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত দুলক্ষাধিক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ, জ্বালাও-পোড়াও অভিযান অপারেশন সার্চলাইট। প্রায় এক কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় গ্রহণ এবং মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান, রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহ ও কূটনৈতিক সমর্থন, সমগ্র মুক্তিকামী বিশ্ব ও জনতার আকণ্ঠ সমর্থন এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধেই পৃথিবীর মানচিত্রে আরও একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্ম হয়- সেই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। স্বাগতম হে স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত দিনটিতে সমগ্র জাতি এই দিনে বাঁধভাঙা প্রাণের উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হবে। একদিকে হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণের সুখ ও আনন্দ, অপরদিকে স্বজন হারানোর ব্যথা-বেদনার এক আবেগঘন মিশ্র পরিবেশের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও মুক্তিকামী লাখো মানুষ নানা ব্যঞ্জনায় পালন করবে আজকের দিনটি। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ দেশের সব স্মৃতির মিনার। হৃদয়পটে সৃষ্ট গভীর ক্ষত থেকে ভেসে উঠবে রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম- এ পঙ্ক্তিমালার মর্মার্থ।
ইতিমধ্যেই সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুট ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করায় দেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী লক্ষ-কোটি মানুষের মনে বিরাট আশার সঞ্চার হয়েছে। তরুণ ও যুব সমাজ গভীর আগ্রহ নিয়ে শতাব্দীর এ ভয়াবহতম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দেখার জন্য উদগ্রীব। সমগ্র জাতির এখন একটাই প্রত্যাশা- তারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলার মাটিতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস তথা যুদ্ধাপরাধীদের আর প্রকাশ্যে দেখতে চায় না। বাংলার মাটি ও মানুষ দেখতে চায় না মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারী ওই নরপিশাচদের। পাক বাহিনীর দোসর ওইসব নরঘাতকের প্রতিটি নিঃশ্বাসে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা এ বাংলার শ্যামল সবুজ প্রকৃতিতে। প্রকৃতিও আজ প্রতিশোধমুখর। ওদের সর্বনাশ দেখতে চায় মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের পরিবার, সম্ভ্রমহারা মা-বোন, স্বামীহারা স্ত্রী, ভাইহারা বোন, সন্তানহারা মা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি বাঙালি।
তারপরও বলব, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসরদের সৃষ্ট নৈরাজ্য, অবক্ষয়, অস্থিতিশীলতা এবং অশান্তির মাঝেও কষ্ট করে নিঃশ্বাস ফেলছে মানুষ, ওই বিচার দেখার জন্য। এ অসহায়ত্ব নিশ্চয়ই দূর হবে একদিন। সেদিন বর্ণময় আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হবে বাংলার প্রকৃত রূপ। হেসে উঠবে চারদিক। সবাই গর্ব করে বলবে- এ দেশ আমার, এ মাটি সোনা, আমরা সবাই সূর্য সন্তান। সেই আশাজাগানিয়া স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজও মুক্তির প্রহর গুনছে বাংলার লাখো-কোটি মানুষ।
৪৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বাণী দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রমুখ। এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আ’লীগের কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ছয়টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের অব্যবহিত পর)। সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
এছাড়াও সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২৭ মার্চ রোববার বিকেল তিনটায় দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ উপলক্ষে সিলেট জেলা প্রশাসন, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা কার্মসূচি গ্রহণ করেছে।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি