ইতিহাসের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

প্রকাশিত: ১০:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৩

ইতিহাসের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

সুনির্মল সেন :
দেশের মন্ত্রীসভায় থাকা না থাকা, এ ছাড়া সংগঠনের সভাপতিমন্ডলী থেকে ডিমোশন-এসব বিতর্ক- সমালোচনা করে ইতিহাসের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে মাপা যাবে না।তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পার্লামেন্টারিয়ান ও উপ-মহাদেশের অন্যতম সেরা।

 

জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্যের বিতর্ক ছিল দেশবাসীর কাছে অতুলনীয়।অনেক সময় জাতীয় সংসদে আমরা কি দেখতে পাই,একে অপরকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। এক্ষেত্রে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দেখিয়ে দিয়ে গেছেন- গালি না দিয়েও যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে, রেফারেন্স দিয়ে, হাস্যরস করে, ভদ্র ভাষায় সুন্দর সাবলীল ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায়।

 

শুনতাম আর ভাবতাম কিভাবে সম্ভব। এতো অল্প সময়ে তাৎক্ষনিক ভাবে এমন অসাধারণ বক্তব্য দেওয়া।তাঁর বক্তব্য শুনে প্রতিপক্ষের সাংসদরাও মুগ্ধ হয়ে যেতেন,কথামালার জাদুতে।আমাদের প্রতিনিয়ত পীড়া দেয় যে দুঃখ, তাঁর কাছ থেকে সাংসদরা আজও শেখেননি অনেক কিছু।

 

প্রচুর পড়াশুনা, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা,প্রজ্ঞা, কথা বলার বাচন ভঙ্গি হিউমারের মিশেল তাঁকে ইতিহাসের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। সেই বায়াত্তরে দেখা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পাঠরত। রাজনীতিতে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। বাংলাদেশে আর একজন শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বের করা কঠিন।”সুরন্জিত দাদারা ক্ষণজন্মা”।তাঁরা দিতে জানে- নিতে জানে না,পরার্থের সেবাই তাঁদের প্রধান ধর্ম।

 

আটবার তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছেন। লেখাপড়া জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় হিমালয় সম হলেও সংসদ লাইব্রেরী থেকে সবচেয়ে বেশী বই ইস্যু করাদের তালিকায় দাদার নাম থাকতো।

 

ভাটির সিংহরাজ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সংবিধান প্রণেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৩৯ খৃস্টাব্দে ৯ ফেব্রুয়ারী বৃহত্তর সিলেটের সুনামগন্জ জেলার দিরাইয়ের আনোয়ারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এই প্রবীন নেতা।স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদ সদস্যসহ চার দশকের বেশীর ভাগ সময় জাতীয় সংসদেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন তিনি।দাদা ৫নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেন।

 

শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর ৭৮ বছরের বাস্তব জীবনে অনেক অনেক অর্জন যেমন আছে, কিছু গ্লানিও রয়েছে।তিনি একজন মানুষ। ভুল শুদ্ধ মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষেরাই করে থাকে।তিনি কোন রোবট না। তবে আমরা তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে হ্রদয়ে ধারণ করাকে। সংবিধান তৈরি কালে যেমন ছিলেন, ১৯৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার গুরু দায়িত্ব ও পরে তাঁর কাধেই।

 

বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অন্যতম সংবিধান।১৯৭৫ খৃস্টাব্দে স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা স্বৈর-শাসকরা দেশের পবিত্র সংবিধানকে পায়ের বুট দিয়ে পদদলিত করেছে, বারংবার কাটাছেড়া করেছে।বাঙ্গালীদের সেই ক্ষত পোষানোর দায়িত্ব সুচারুভাবেই পালন করেছেন, সমাজ-প্রগতির রাজনীতির কিংবদন্তি, বঙ্গবন্ধু মুজিবের আদর্শের সৈনিক শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি।অনেক বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁর কেরেসম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে সংবিধান আবারো অসাম্প্রদায়িতায় ফিরে এসেছে।

 

শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খেঁটে খাওয়া মানুষের জন্য সারাজীবন রাজনীতি করেছেন।তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিলো একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী, বৈষম্যহীন, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তেমন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তৃতীয় প্রয়াত বার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি প্রকৃতভাবে শ্রদ্ধা জানানো হবে।জয়তু শ্রী সুরন্জিত সেনগুপ্ত।জয়তু ইতিহাসের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব তোমায় শ্রদ্ধাঞ্জলী।

 

লেখক : কবি ও সাংবাদিক।

(সুরমামেইল/এফএ)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com