ইতিহাসের সাক্ষী শ্রীমঙ্গল কাছারি বাড়ি

প্রকাশিত: ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০১৬

ইতিহাসের সাক্ষী শ্রীমঙ্গল কাছারি বাড়ি

19965_x4-300x225

সুরমা মেইল : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা সদরে হবিগঞ্জ রোড (ঢাকা-সিলেট) মহাসড়কের পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপনা কাছারি বাড়ি।

পাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিস ও শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর আর কাছারি বাড়ির নাম অনুসারে নির্মিত হয়েছে ‘কাছারি জামে মসজিদ’।

১৮৯৭ সালে ত্রিপুরা মহারাজা এ কাছারি বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপিত কাছারি বাড়িটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। শতাধিক বছরের পুরোনো কাছারি বাড়িটি ৩টি কক্ষ, ৮টি দরজা ও ৯টি জানালা বিশিষ্ট ১ তলা ভবন, যা প্রস্থে ৩০ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট লম্বা। প্রতিটি দেয়াল ১২ ইঞ্চি চওড়া চুন সুরকি দ্বারা নির্মিত। বাড়িটি অযত্ন অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের সম্মুখীন।

এই ভবনটি সংস্কার করা হলে ঐতিহ্যের দর্শন হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের শিক্ষণীয় বিষয় হওয়ার পাশাপাশি দর্শন কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শতাধিক বছরের পুরোনো শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাচীন নিদর্শন ত্রিপুরা মহারাজার কাছারি বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং তার রাজত্বকালে নির্মিত কালের সাক্ষী এ ভবনটির আদিরূপ অক্ষুণ্ন রেখে দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশকে সামনে রেখে সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

পর্যটন শিল্পের কথা ভেবে পর্যটকদের জন্য ঐতিহ্যবাহী এ কাছারি বাড়িটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সরকারি বরাদ্দ চেয়ে পত্র প্রেরণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ কাছারি বাড়ির সুনির্দিষ্ট ইতিহাস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষণের জন্য এ সব কিছুই এখানে সংরক্ষণ করা হবে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা জানান, সিলেট বিভাগে এরকম ঐতিহ্যবাহী পুরোনো বাড়ি খুব কম আছে। ত্রিপুরা রাজার এ কাছারি বাড়িটি ১.৬৭ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে শতাব্দীর প্রাচীন একটি পাকা ভবন, শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি পুকুর রয়েছে।

১৮৯৬ সালে এক ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলে মতিগঞ্জের সদরদপ্তর বিলাসছড়ার হুমকির মুখে পতিত হওয়ায় তা শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই সময় শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কে কাছারি বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ত্রিপুরা মহারাজা। তৎকালীন সময়ে মহারাজার পদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শৈলেন্দ্র গুহ শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের খাজনা আদায়ের জন্য সহকারী এ্যাস্টেট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ কাছারি বাড়িতে তখন খাজনা আদায় হতো।

মো. নুরুল হুদা আরো জানান, ২০১৪ সালে ত্রিপুরা মহারাজার ১২০ বছরের প্রাচীন এ কাছারি বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে পাকা ভবনটিকে কিছুটা সংস্কার করে ভবনটিকে রঙ করা হয়েছে এবং একটি নেমপ্লেট সাঁটানো হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও দেশের অন্যতম পর্যটন উপজেলা এবং চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং এসব বিষয় মাথায় রেখে এ কাছারি বাড়িটি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থানের মতই আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com