সিলেট ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
কানাইঘাট প্রতিনিধি :
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিন বানীগ্রাম ইউনিয়নের কান্দিগ্রামে সাজানো ডাকাতির ঘটনার নাটক সাজিয়ে প্রতিপক্ষ লোকজনদের মামলায় ফাঁসানোর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় অনেকে বলেছেন, পূর্ব বিরোধ ও শত্রুতার জের মেটানোর জন্য গত সোমবার পরিকল্পিত ভাবে এক নারীসহ ২ জনকে কৌশলে তাদের বাড়ীতে নিয়ে এসে।
পরে সাজানো ডাকাতির ঘটনার পরিকল্পনাকারী কান্দিগ্রামের মৃত হাজী মঈন উদ্দিনের পুত্র মাশহুদ আহমদ ও তার ভাই শাহজামান, সুলায়মান জোরপূর্বক ভাবে হত্যাসহ মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে একই ইউপির লামা দলইকান্দি গ্রামের নিরীহ জামাল উদ্দিনের স্ত্রী আলফাতুন নেছা (৫০) ও কান্দিগ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের পুত্র নজরুল ইসলামহর (৪৮) কয়েকজন মিলে তাদের বাড়ীতে ডাকাতি করেছে মর্মে বক্তব্য রেকর্ড করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি স্বীকারোক্তি নিয়ে থানায় নিয়ে এসে পুলিশের কাছে তাদের সোপর্দ করে। এ ঘটনায় এলাকায় জনমনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
থানা পুলিশ পুরো বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তিসহ অধিকতর তদন্ত করে মাশহুদ ও তার ভাইয়েরা তাদের শত্রæপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ডাকাতির নাটক সাজিয়েছে বলে তাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
থানায় আটক আলফাতুন নেছা ও নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তারা বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি গভীর রাতে মাশহুদ ও তার ভাই সুলায়মান সহ তাদের পরিবারের লোকজন তাদের বাড়ীতে ডাকাত ঢুকেছে। ডাকাতরা মালামাল লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছে মর্মে এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিলে নজরুল ইসলাম সহ এলাকার অনেকে তাদের বাড়ীতে যান।
এ সময় তারা বাড়ীর লোকজনদের বেঁধে ডাকাতরা মালামাল নিয়ে গেছে, গুলি করেছে বলে এলাকার লোকজনের কাছে বলে।
কিন্তু কানাইঘাট থানা পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাশহুদের বসত ঘরে ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটেছে তার কোন আলামত তারা পাননি। বিষয়টি তখন পুলিশের কাছে এক ধরনের সাজানো মনে হয়েছিল। পরে এ ঘটনায় মাশহুদ আহমদ কানাইঘাট থানায় বাদী হয়ে তার বসত বাড়ীতে চুরি হয়েছে মর্মে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আাসমী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যা থানার মামলা নং-১১, তাং-১৯/০১/২২ইং।
মামলাটি পুলিশি তদন্তে থাকা অবস্থায় মাশহুদ ও তার ভাই শাহজামান, সুলায়মান পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেদের বাড়ীতে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ কয়েকজনকে ফাঁসানোর জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
আলফাতুন নেছা বলেন, তিনি এলাকায় অনেকটা ঘটককিরি করে থাকেন। তার স্বামী একজন অসুস্থ দিনমজুর।
গত রোববার তিনি মাশহুদ আহমদের বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মা তাকে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে তার নাতনির জন্য একজন পাত্র দেখার জন্য বলেন। পরদিন সোমবার সকাল অনুমান ৯টার দিকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তিনি মাশহুদ আহমদের বসত বাড়ীতে গিয়ে তার মাকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। বাড়ীতে থাকা তার ছেলে সুলায়মান আহমদ আমাকে বলে তার মা বোনের বাড়ীতে গেছেন আপনি বসেন কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি চলে আসবেন। বলে তাকে চা-বিস্কুট খাওয়ানো হয়। একপর্যায়ে সুলায়মান আহমদ ও তার অপর দুই ভাইকে বাড়ীতে ডেকে এনে বসত ঘরের একটি কক্ষে তাকে আটক করে রাখে তারা।
আলফাতুন নেছা বলেন, এ সময় মাশহুদ হাতে একটি বন্দুক, সুলায়মান রশি, ধারালো অস্ত্র এবং শাহজামান নাগা মরিছ হাতে থাকা এসিড জাতীয় পদার্থ নিয়ে এসে বলে আমাদের বাড়ীতে যে ডাকাতি হয়েছে তা তুই জানিছ আমাদের কথামতো যাদের নাম আমরা বলব তারা আমাদের বাড়ীতে ডাকাতি করেছে বলে পুলিশ ও এলাকাবাসীকে বলবে। তা না হলে তোকে প্রানে হত্যা করে ক্ষেতের মাঠে ফেলে দিব বলে তারা আমাকে মুখে বন্দুক ও পেটে ধারালো ছুরি ধরে ব্যাপক মারধর করে বিবস্ত্র করে এবং নাকে মুখে দেড়েছের পানি ছিটিয়ে দিবে মুখে এ্যাসিড মেরে দু’চোখ অন্ধ করে দিবে এধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন, মারধর ও প্রাননাশের হুমকি দিলে প্রানের ভয়ে আমি তাদের কথা মতো তাদের শেখানো আকুনী গ্রামের জাহিদ, তাদের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে ডাকাতি করেছে বলব বলি। এ সময় তারা আমার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে।
একপর্যায় তারা আমার মোবাইল ফোন তাদের কাছে নিয়ে সিম খুলে তাদের মোবাইল ঢুকিয়ে নজরুল ইসলামকে তাদের শেখানো মতো ফোন দেওয়ার জন্য আমাকে বলে। আমি নজরুল ইসলামকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে ফোন করে আমার চিকিৎসার জন্য দেখা করে টাকা দেওয়ার জন্য বলি।
থানা হাজতে থাকা নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার চাচাতো ভাই মাশহুদ, সুলায়মান, শাহজামান আমার উপর একটি ঘটনায় ক্ষিপ্ত ছিল। আমিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মূলত নিজের বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনার নাটক সাজায় তারা। তিনিসহ ঘটনার দিন তাদের বাড়ীতে অনেক আসলে তারা বলে তাদের বসত বাড়ীতে ডাকাতি হয়েছে ডাকাতদের তাড়া করতে গিয়ে তাদের ইয়ারগান বন্দুক দিয়ে গুলি করেছে। এরপর আমি আর কিছু জানিনা।
সোমবার সন্ধ্যার দিকে আমার প্রতিবেশী দরিদ্র আলফাতুন নেছা তাকে চিকিৎসার জন্য ২ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য আমার কাছে ফোন দিলে আমি তার সাথে দেখা করার জন্য যাবার পথে মাশহুদ আহমদের বাড়ীর পাশে যাওয়া মাত্র সে সহ তার দু’ভাই সহ আরো কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর ও টানা হেচড়া করে তাদের বসত বাড়ীতে নিয়ে যায়।
এরপর তারা আমাকে একটি কক্ষে আটক করে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র, রশি, মেগলাইট সহ ইত্যাদি জিনিসপত্র নিয়ে এসে প্রথমে আমাকে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা আমাকে খুন করে টুকরা টুকরা করে ফেলবে তাদের বাড়ীতে ডাকাতির আসামী করবে রিমান্ডে এনে মারধর করবে বলে। আমাকে তারা এলোপাতাড়ী ভাবে মারধর করে গলায় ধারালো লম্বা দা ধরে বলে তাদের বাড়ীতে যে ডাকাতি হয়েছে এর সাথে আমিসহ আকুনী গ্রামের জাহেদ ও দলইকান্দি গ্রামের হাজী মুহিবের ছেলে জাকারিয়াসহ তাদের শেখানো কয়েকজনের নাম বললে আমাকে হত্যা করে ফেলবে।
একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে আমি তাদের কথামতো স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী থানা পুলিশও এলাকাবাসীর কাছে দিব বলে স্বীকার করলে তারা মসজিদের মাইকে বলে তাদের বাড়ীতে যে ডাকাতি হয়েছে। আমিসহ আলফাতুন নেছা স্বীকার করেছি মাইকিং করলে তাদের বাড়ীতে এলাকার প্রচুর লোকজন উপস্থিত হন। আমরা প্রাণের ভয়ে তাদের বাড়ীতে ডাকাতিতে ছিলাম মর্মে এলাকার অনেকের কাছে বলি। আমাদের কথাগুলো তারা রেকর্ড করে ভিডিও করে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আমাদেরকে সুলায়মান ও তার সহযোগিরা থানায় নিয়ে সোপর্দ করে।
আমাদেরকে প্রানে হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের কথামতো জবানবন্দী দেওয়ার জন্য বললে প্রান রক্ষার্থে আমরা এমন কথা বলি। নজরুল ইসলাম বলেন কয়েক বছর পূর্বে আমার চাচাতো ভাই সুলায়মানের এক মামা একটি মামলার ফেরারী আসামী হলে তার মামাকে আমার বসত বাড়ীতে রাখার জন্য বলেন। পরে এক দিন রাতে কানাইঘাট থানা পুলিশ তার মামাকে আমার ঘর থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলে তখন সুলায়মান ও তার ভাইয়েরা তাদের মামাকে আমি পুলিশ দিয়ে ধরিয়েছি বলে আমার উপর চরম প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয়। এর পর থেকে তারা আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। তাদের মামাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় এই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি সহ আরো কয়েকজন তাদের বাড়ীতে ডাকাতি করেছি বলে নাটক সাজিয়ে হয়রানী করার জন্য রাস্তার উপর থেকে আমাকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং তাদের কথামতো সেখানো কথা পুলিশের কাছে না বললে খুন করার হুমকি দেয়। নজরুল ইসলাম ও আলফাতুন নেছাকে থানায় নিয়ে আসার পর পুলিশ মাশহুদ আহমদের বাড়ীতে গত ২৫ জানুয়ারি কথিত ঘটনার সাথে তারা জড়িত ছিল কি না? প্রযুক্তি সহ অধিকতর তদন্ত এবং তাদের নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মাশহুদের বাড়ীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি সত্য নয় তারা একটি নাটকীয় ঘটনা সৃষ্টি করে নজরুল ইসলাম ও আকুনী গ্রামের জাহেদ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন ঘটনা মূলত সাজায়।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোক্তার আলীসহ থানা পুলিশের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাহেদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক দিন থেকে সুলায়মানের বিরোধ ছিল। অপরদিকে নজরুল ইসলাম তাদের মামাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়াছে এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মূলত তাদেরকে সাজানো মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য নিজেদের বাড়ীতে ডাকাতি হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার ও নাটক সাজানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরীহ আলফাতুন নেছাকে তাদের বাড়ীতে আটক করে প্রানে হত্যার হুমকি দিয়ে নজরুল ইলামকে ফোন দিয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য বলে। তাকেও আটক করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী নিয়ে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে তাদের কথা মতো পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বলে।
থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, মাশহুদ আহমদের বাড়ীতে কোন ডাকাতি বা চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়নি। সুলায়মান ও তার ভাইয়ের তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এমন নাটকীয় ঘটনা সৃষ্টি করে আলফাতুন নেছা ও নজরুল ইসলামকে গত সোমবার তাদের বাড়ীতে নিয়ে আটক করে রাখে। পরে তারা গত মঙ্গলবার বিকেল ২টার দিকে তাদের থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও নানা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তদন্ত করে দেখা গেছে ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো। যেহেতু নজরুল ইসলাম ও আলফাতুন নেছাকে থানায় সোপর্দ করেছে এজন্য মাশহুদ আহমদ থানায় যে চুরির মামলা করেছি সেই মামলায় জড়িত সন্দেহে বুধবার তাদের কোর্টে প্রেরন করা হয়।
মামলাটি দ্রুত তদন্তপূর্বক এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম।
এলাকার সচেতন মহল পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ ঘটনার সাথে প্রকৃত যারা ঘটনা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিলেটের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি