জাদুকাটায় এবার ‘মব করে’ ৩শ কোটি টাকার বালু লুট

প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২৫

জাদুকাটায় এবার ‘মব করে’ ৩শ কোটি টাকার বালু লুট

Manual5 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীতে এবার ‘মব করে’ ৩শ কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। টানা পাঁচ দিনে এসব বালু লুট করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপি কর্মী ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মামলা হয়েছে।

 

বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, অবৈধ বালু লুট বন্ধ না হলে নদী ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

 

উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা আল জেদান ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হক একই রকম তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, জাদুকাটার ইজারাবিহীন এলাকা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে বালু লুট করছে। তারা লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের উত্তরে সাহিদাবাদ, কেউরি, কাঞ্চনখালের কয়েকশ একর জায়গায় প্রতি ঘনফুট খনিজ বালু উত্তোলনে ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে আসছে। জাদুকাটার এসব জায়গা সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।

 

Manual1 Ad Code

লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ৭ থেকে ১১ অক্টোবর পাঁচ দিনে গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম মাষ্টার ওরফে খেলু মিয়া, সতুর ছেলে হারুন, আক্তারের ছেলে উপজেলা যুবদলের সদস্য আহবায়ক জাহাঙ্গীর তার সহোদর তমিজ, জাহাঙ্গীর, মামা ফানা উদ্দিন, মামাত ভাই এজিবুল, রাজমিনের ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চোরাকাররি ফুসকা জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী প্রার্থী গোলাপ মাহমুদ তার চাচাত ভাইদের দিয়ে ও আওয়ামী লীগ নেতা খাঁজা মাঈনুদ্দিন, আবুবক্কর কয়েক গ্রামের যুব সমাজকে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মব তৈরি করে প্রায় ৩শ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ খনিজ বালু বিক্রির আড়ালে কয়েক কোটি টাকা চাঁদাবাজি করিয়ে নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

 

জানা যায়, যে খনিজ বালু লুট হয়েছে দেশের অন্য কোনো নদীতে এই বালু পাওয়া যায় না। এই বালুর মান ২.০৫। ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়াই এর মূল্য প্রতি ঘনফুট ১০০ টাকা। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ ঘনফুট ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কয়েক হাজার ছোট ছোট স্টিল বডির ট্রলারে বালু লুট হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই অন্তত ৬০ কোটি টাকার বালু লুট হয়।

 

এ ব্যাপারে জাদুকাটা বালু মহাল-১ এর ইজারাদারের পক্ষে দায় এড়াতে মোশারফ বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে তাহিরপুর থানায় ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

 

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-লাউড়েরগড়ের মৃত কিবরিয়ার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম ওরফে খেলু মিয়া, ঘাগটিয়া প্রামের মৃত নুর জালালের ছেলে কথিত পরিবেশবাদী নেতা কাসমির রেজা ওরফে কাসমিরুলের ভাই আস্তারুল, লাউড়গড় গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খাজা মাঈনুদ্দিন, মকবুলের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী আবুবক্কর, ময়দরের ছেলে ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চোরাকারবারিদের সোর্স রফিকুল ইসলাম, আফজল উদ্দিনের ছেলে খনিজ বালি লুটকারি ও বালিচর বিক্রেতা নারজেল, পারভেজ, কবির, ইঞ্জিলের ছেলে পুলিশ অফিসার কামালের ভাই চোরাকারবারি নজির, আব্দুল মান্নানের ছেলে আলহাজ, জাহিদ মিয়ার ছেলে চোরাকারবারি শাজাহান, শাহিন আলম, বিল্লাল আমিনের ছেলে হেনাজ, ,ফানা উদ্দিনের ছেলে অস্ত্রধারী বালি লুট ও চাঁদা আদায়কারি এহিবুল, আব্দুল খালেকের ছেলে মাদক চোরাকারবারি মজিবুর ওরফে ল্যাংটা মজিবুর, জালালের ছেলে আলমগীর, সুলতান আমিনের ছেলে নোরাঙ্গীর,শাহাদুল,কাছম আলীর ছেলে আব্দুর রহমান,আবুল হোসেনের ছেলে সুর আলম, সাইতুর ছেলে কাঞ্চনখাল দখলকারি, বালির চর বিক্রেতা, চাঁদা আদায়কারি শফিকুল, হেদায়েতের ছেলে মোহাম্মদ আলী, হুমায়ুন, তাজ উদ্দিনের ছেলে রুস্তম, আমুর ছেলে আব্দুল মন্নান, কাছম আলীর ছেলে আব্দুর রহমান, মনরের ছেলে অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ হৃদয়, আবু দুবের ছেলে অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ জুনায়েদ, ছড়ারপাড় গ্রামের মহর আলীর ছেলে জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা পাথ্থর মোতালেবের সহোদর ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মান্নান, আরব আলীর ছেলে এখলাছুর, মাদুর ছেলে আক্কাছ আলী, হেলালের ছেলে রহম আলী, পুরান লাউড়গড়ের শুক্কুর মাহমুদের ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাপ মাহমুদের চাচাতো ভাই শিপন, শোভন, শাহানশাহ, রহম আলীর ছেলে মোস্তফা, ছেলে মাইনুদ্দিন, উসমান গণির ছেলে অমর গণি, সুরুজের ছেলে শাহ আরফিন, খুর্শিদের ছেলে আজগর, মমিন (সাবেক) মেম্বারের ছেলে বাচ্চু,সাহিদাবাদের নোয়াজ আলীর ছেলে মহরম আলী, রুপ আলীর ছেলে মোবারক হোসেন, মমিন (সাবেক) মেম্বারের ছেলে আসাদ মিয়া, সাবিকুল, জালালের ছেলে আলমগীর, বিশ্বম্ভরপুরের মিয়ারচর গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন ডালিম, মনোয়ার হোসেন অলিম সহ অজ্ঞাত নামা ২০ থেকে ৩০ জন।

 

Manual8 Ad Code

উপজেলার জাদুকাটা নদী তীরবর্তী বসতির রুহেল বললেন, দেশ বিদেশের মানুষজন দেখেছেন কি কায়দায় মব তৈরি করে লুটে নেয়া হল সরকারের ৩শ কোটি টাকার খনিজ বালু। শুরুতে তাহিরপুরের ইউএনও মেহেদী হাসান মানিক, থানার ওসি দেলোয়ার, এ্যাসিল্যান্ড শাহরুখ আলম শান্তুনু সরকারি খনিজ বালু লুটে কোন রকম প্রতিরোধমুলক ভুমিকাই রাখেননি। তারা খনিজ বালু লুটের পর চরে এসে ফটোশেন, ভিডিও ধারণ করিয়ে ফাইল ওয়ার্কের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন, জনগণকে সচেতন করতে। এমন কর্মকান্ডের বিষয়টি দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে।

 

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের শিগ্গিরই আইনের আওতায় আনা হবে।

 

Manual2 Ad Code

বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, ৭ অক্টোবর গভীর রাতে কমপক্ষে দুই হাজার বাল্কহেড একসঙ্গে ঢুকেছে। একেকটি বাল্কহেডে ৮-১০ জন করে শ্রমিক ছিল। বিজিবির লাউড়েরগড় ক্যাম্পের পক্ষে এত মানুষকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর বালু লুটের বিষয়টি জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।

 

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বললেন, জাদুকাটার ইজারাবিহিন চর, নদীরপাড় কাটার ঘটনায় ইজারাদারকে শোকজ করা হয়েছে। গেল পাঁচ দিন ধরে যারা পাড় কাটায় বালু লুটে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়েরের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে: বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, জাদুকাটা নদীতে ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে কিছু কুচক্রী মহল এবং অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছে। এতে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে তীরের দিকে লাউড়েরগড় এলাকায় বিজিবির বিওপিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

Manual3 Ad Code

 

(সুরমামেইল/এইচএসএ)


সংবাদটি শেয়ার করুন
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code