জীবন যুদ্ধে বিজয়ী রহিমা! বসবাসের একটু জায়গার প্রয়োজন

প্রকাশিত: ৭:৩২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬

শাহ তজম্মুল আলী নিলু নবীগঞ্জ থেকে :: যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন, এটাকে বিশ্বাস করেই এক নারীর পথ চলা। এমনকি নেই তার বাড়ি, গাড়ী, দামী কাপড়-ছোপড়, নেই কোন বসসাবের নিজস্ব একটু জায়গা। স্বামী সন্তান নিয়ে থাকার জন্য মহা সড়কের ব্রীজের নিচে ঝড়, বৃষ্টি তোফানকে অতিক্রম করে জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত রহিমা বেগম।

ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের ব্রীজের নিচে বসবাস, তাও আবার দীর্ঘ একযুগ ধরে। চোখ কপালে উঠবে যখন জানবেন ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি তিনি। নাগরিক সুবিধা থাকলেও নিজের মাথা গোজাঁর ঠাই নেই, এই জনপ্রতিনিধির। তিনি হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা রহিমা বেগম।

শীত, বর্ষায় কোথায়ও যাওয়ার জায়গা নেই এই মহিলা মেম্বারনীর পরিবারের লোকজনের। দীর্ঘ একযুগ ধরে নবীগঞ্জ উপজেলার ব্যস্ততম জনবহুল ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর বাজার সংলগ্ন মনু খালের ব্রীজের নিচে বসবাস করে আসছেন তিনি। দিন-রাত ওই ব্রীজের উপর দিয়ে সারাদেশের ছোট বড় কয়েক হাজার যান বাহন চলাচল করে। আর বর্ষার সময় খালে পানি হলে বেড়ে যায় দূর্ভোগ। ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের বয়স ৫০শের কাছাকাছি। তিনি আউশকান্দি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের মকদ্দুছ মিয়ার স্ত্রী। তাদের ২ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।

অসুস্থ্য স্বামী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেচেঁ থাকার তাগিদে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। দীঘদিন ঘটক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। আর মাসে ২/১টি বিয়ে পড়াতে পারলেও নুন আন্তে পান্তা ফুরায় রহিমার। ঘটকালির সুবাধে এলাকার সকল শ্রেনী পেশার লোকজনের সাথে রহিমার সু-সর্ম্পক থাকায় বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি নির্বাচিত হন। অভাব কখনোই থামাতে পারনেনি রহিমা বেগমকে।

এবার সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েও ভূমিহীন তালিকা থেকে নাম কাটতে পারনেনি তিনি। সবার আগে ছুটে যান এলাকাবাসীর সুখে-দুঃখে তাদের পাশে। মানব সেবার প্রত্যয়ে তিনি ৩বার নির্বাচন করেছেন। কিন্তু দুখের বিষয় গত ২বারের নির্বাচনে তিনি পরাজয় মেনে নিলেও চলতি বছরের ২৮মে নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর থেকে কোমর বেধেঁ নেমে পড়েন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায়। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ৩জন পদপ্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাইক মার্কা প্রতীক নিয়ে।

তবে, ভোটারা বিচার-বিবেচনা করে অপর দুই প্রাথীর চেয়েও প্রায় ১৮শ ভোট বেশি দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসাবে রহিমা বেগমকে নির্বাচিত করেন। মাথা গোঁজার ঠাই পেতে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন ইউপি সদস্য রহিমা বেগম।

এ বিষয়ে আউশকান্দি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রহিমা বেগমের এ দূরাবস্থায় আমরা সহব্যথীত সহকর্মীরা। তাকে খাস জমি দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় আমরা জানতে পেরেছি। তাই আমরা খুব শীঘ্রই রহিমা বেগমের পূনবাসনের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com