সিলেট ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০১৬
তথ্য ও প্রযুক্তি : কোন একটি সুন্দর স্মৃতিকে ধারণ করে রাখার জন্য ছবি তোলার কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে ডিএসএলআর, ডিজিটাল ক্যামেরা ও স্মার্টফোনের এই যুগে ছবি তোলা যেনো কয়েক মুহূর্তের একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেমন ছিল এর সূচনাটা? এর উত্তর জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৮২২ সালে। কারণ বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফটি তৈরি হয় তখনই। আর এর ফটোগ্রাফার ছিলেন ফরাসি উদ্ভাবক জোসেফ নিসেফোর নীপ্স। তাই নীপ্সকেই ফটোগ্রাফির জনক এবং বিশ্বের প্রথম সফল ফটোগ্রাফার হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফটি ছিল পোপ সপ্তম পিউসের একটি প্রতিকৃতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটি কপি তৈরি করার সময় এটি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৮২৫ সালে নীপ্স সতেরো শতকের একটি খোদাই করা ফ্লেমিশ চিত্রকর্মের উপর ভিত্তি করে তার দ্বিতীয় ফটোগ্রাফটি তৈরি করেন।
আজ আমরা যত সহজে একটি নিখুঁত ছবি পেয়ে থাকি, পূর্বে তা এতো সহজ ছিল না। তখনকার দিনে ছবি তোলা ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি বিষয়। আসুন জেনে নেই ফটোগ্রাফি ইতিহাসে ঘটা প্রথম কিছু ঘটনা।
প্রথম মানুষযুক্ত ছবি : কোন সুন্দর জায়গায় ভ্রমণ করতে গেলে কিংবা প্রিয়জনদের সাথে থাকা মুহূর্তগুলো ফ্রেমের চারকোণে আটকে রাখতে আমরা প্রায়ই ছবি তুলে থাকি। কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হল বিশ্বের প্রথম মানুষযুক্ত ছবিটি তোলা হয় ফটোগ্রাফি আবিষ্কারের বেশ কয়েক বছর পরে, ১৮৩৮ সালে। ছবিটি তোলেন লুই দাগ্যায়ার নামের একজন ফরাসি উদ্ভাবক। ছবিটি ছিল প্যারিসের একটি রাস্তার। ছবিটি ডেভেলপ করতে দশ মিনিট সময় লাগায় রাস্তার চলমান লোকজন ও যানবাহন ছবি থেকে মুছে যায়। কিন্তু রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সম্ভবত জুতা পালিশ করাচ্ছিলেন যে ব্যক্তিটি তিনি স্থান করে নেন বিশ্বের প্রথম তোলা মানুষযুক্ত ছবিতে। তবে দুর্ভাগ্যবশত আজও তার নাম বা পরিচয় আমাদের কাছে অজানাই থেকে গেছে।
প্রথম সেলফ পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফ : পেশাদার রসায়নবিদ রবার্ট কর্নেলিয়াস তার বাবার বাতির দোকানে কাজ করতেন। একদিন তার দোকানে এক খদ্দের এসেছিলেন একটি টাইপের জন্য সিলভার প্লেটিংয়ের কাজ নিয়ে। টাইপ ছিল তখনকার যুগের ছবি তোলার একটি পদ্ধতি। কর্নেলিয়াস সেই খদ্দেরের কাছেই ছবি তোলার এই নতুন পদ্ধতির কথা শোনেন এবং শুরু করে দেন এর চর্চা। তিনি বেশ উৎসাহের সাথে টাইপকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। আর এই গবেষণা করতে গিয়েই কর্নেলিয়াস তুলে ফেলেন বিশ্বের প্রথম সেলফ পোর্ট্রেট। ক্যামেরার সামনে টানা ১৫ মিনিট বসে থেকে ছবিটি তুলেছিলেন কর্নেলিয়াস। পরে ছবিটির উল্টোপিঠে নিজ হাতে লেখেন- ‘দ্য ফার্স্ট লাইট পিকচার এভার টেকেন, ১৮৩৯।’ রবার্ট কর্নেলিয়াসের বিখ্যাত সেই সেলফ পোর্ট্রেটটি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে। মজার বিষয় হল বর্তমানে ছবি তোলার জনপ্রিয় পদ্ধতি সেলফি’র সূত্রপাত কিন্তু রবার্ট কর্নেলিয়াসের সেই সেলফ পোর্ট্রেট থেকেই।
বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবি : আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন না কোনভাবে যে বিজ্ঞানের অবদান আছে, তার প্রমাণ মেলে বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবির কথা ভাবলে। বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবিটি তোলা হয় ম্যাক্সওয়েলের একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা থেকে। ১৮৫৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত স্কটিশ বিজ্ঞানী জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল সর্বপ্রথম তিন রঙা ফিল্টার ব্যবহার করে ত্রিবর্ণ পদ্ধতিতে রঙিন ছবি তোলার ধারণা প্রদান করেন। তাঁর এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তাঁরই তত্ত্বাবধায়নে বিশ্বের প্রথম রঙিন ছবিটি তোলেন টমাস সাটন। এটি ছিল একটি রঙিন চেকযুক্ত ফিতার ছবি। ছবিটি তোলা হয় ১৮৬১ সালে।
মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম ছবি : মহাকাশ থেকে প্রথম ছবি তোলা হয় ১৯৪৬ সালে। ছবিটি তোলে মানুষবিহীন রকেট ভি-২। ১৯৪৬ সালের ২৪ অক্টোবর রকেটটি নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এতে যুক্ত ছিল একটি ৩৫ মিলিমিটার মোশন ক্যামেরা। আর এই ক্যামেরা দিয়েই পৃথিবীর বায়ূমণ্ডলের বাইরে ভূমি থেকে ৬৫ মাইল উচ্চতায় রকেট থেকে তোলা হয় মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম ছবি।
ইন্টারনেটে প্রকাশিত প্রথম ছবি : এখনকার দিনে ছবি তুললেই আমরা তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম তথা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে থাকি। আচ্ছা ভাবুন তো, কেমন ছিল ইন্টারনেটে প্রকাশিত প্রথম ছবিটি? ইন্টারনেটে প্রকাশিত প্রথম ছবিটি ছিল ইউরোপীয় আণবিক গবেষণা সংস্থা ‘সার্ন’ এ কর্মরত মেয়েদের একটি প্যারোডি গানের দলের ছবি। ছবিটি প্রকাশ করা হয় ১৯৯২ সালে। এটি প্রকাশিত হয় বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট ইনফো.সার্ন.সিএইচ নামক ওয়েবসাইটে।
সুত্রঃ ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি