জৈন্তার বুকে এক টুকরো পেহেলগাম!

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২৫

জৈন্তার বুকে এক টুকরো পেহেলগাম!

অতিথি প্রতিবেদক :
মেঘালয়ের আকাশ ছোঁয়া সুবিশাল পাহাড়ের বুক চিরে নামছে শুভ্র ঝর্ণা। সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষা সারি সারি সুপারি গাছ। পাহাড়ের পাদদেশেই বয়ে চলছে শান্ত নদী। বিস্তীর্ণ ভূমিতে সবুজ রুপ লাবণ্যতা, গাছে গাছে পাখির কলতান। এমনই অফুরান নৈসর্গিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত একটি দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ ‘নলজুড়ি ক্রিকেট গ্রাউন্ড’।

 

সিলেট শহর থেকে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার দূরে নলজুড়ি মোকামবাড়ি এলাকার এই ক্রিকেট মাঠটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা ভাইরাল এ মাঠটিকে কাশ্মীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের উপাখ্যান পেহেলগামের সাথে তুলনা করছেন। কেউ কেউ আবার নাম দিয়েছেন মিনি সুইজারল্যান্ড। নজরকাড়া এই মাঠটি এখন ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

 

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের নলজুড়ি বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার ভিতরে ভারতের সীমাম্ত সংলগ্ন এই মাঠের অবস্থান। স্থানীয়দের কাছে এলাকাটি ‘আলুবাগান’ নামেও পরিচিত। ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অসংখ্য দর্শনার্থী ভীড় করছেন মাঠটি দেখতে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ খেলছেন, কেউ দলবেঁধে গানের আড্ডা বসাচ্ছেন, আবার কেউবা শান্ত নদীর তীরে বসে প্রকৃতির সৌরভ নিচ্ছেন।

 

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলোয়াড়েরা এখানে ক্রিকেট খেলতে আসেন। বছরের প্রায় সময়ই এখানে ছোট-বড় বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। তবে এখানে কোনো ম্যাচ আয়োজনের পূর্বে নলজুড়ি ক্রিকেট ক্লাব কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। মাঠে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি সাইনবোর্ড যেখানে মাঠে ড্রোন উড়ানো, বাইক রাইডিং, নো ম্যান্স ল্যান্ডে ঘুরাফেরায় নিষেধাজ্ঞা সহ বেশ কিছু নির্দেশনাবলী রয়েছে। মূলত এই মাঠটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ক্লাবটি।

 

পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের রক্তিম আলোয় মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতীরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মেলে এক মাঝির। নৌকায় উঠার আবদার করতেই মেনে নিলেন তিনি। আকারে ছোট নদীতে কোনো স্রোত নেই, শান্ত আর স্বচ্ছ নদীর বুকে ভাসছে নৌকা। সামনেই মেঘালয়ের দৃষ্টিনন্দন পাহাড় আর ঝর্ণা। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে স্নান করে প্রকৃতি যেন আরও স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে। অস্তগামী সূর্যের তাপটা যেন নির্মল বাতাসের স্বাভাবিক গতির কাছে ম্লান হয়ে গেছে।

 

নদীতে মাছ ধরতে এসেছেন কেউ কেউ। চারণভূমিতে বিচরণ করছে গবাদিপশুর পাল। নদীর বিপরীত পাশেই আরেকটি খেলার মাঠের অবস্থান। এখানে সাধারণত ফুটবল খেলা হয়, বাঁশের তৈরী গোল বারও দেখা গেলো দুই প্রান্তে। এপার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তবে গ্রীষ্মকালে পানি কমে গেলে হেঁটেও পার হওয়া যায়। দুই মাঠের মধ্যবর্তী এই নদী যেন কেবলই একটি জলধারা নয়, বরং এখানকার সৌন্দর্যের অন্যতম বাহক।

 

পাহাড়, ঝর্ণা আর নদীর মিতালিয়ে ঘেরা বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এই মাঠটি এখন পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। জাফলংয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় প্রতিদিনই জাফলং বেড়াতে আসা পর্যটকরা চলতি পথে ভীড় করছেন মাঠটিতে। স্থানীয়দের দাবী, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এটিকে স্টেডিয়ামে রুপান্তরিত করতে পারলে পুরো বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।

 

(সুরমামেইল/নুরুল আলম আলমাস)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com