সিলেট ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৫
মোঃ আব্দুল বাসিত :
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বাংলাদেশ সরকারের একটি অন্যতম প্রধান সংস্থা যা দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংস্থাটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে দ্রুত ও নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জনগনকে সুলভ, নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী ডাক সেবা প্রদান করা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বৃটিশ শাসনামলে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠে। দীর্ঘ সময় ধরে ডাক বিভাগ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌছানোর মাধ্যমে জনগনের সাথে সরকারের সংযোগ স্থাপন করেছে।
ডাক বিভাগের কাজ কেবলমাত্র চিঠিপত্র আদান-প্রদান বা পণ্য সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর অংশ হিসেবে কাজ করে। গ্রামীণ এলাকার মানুষের কাছে যেসব আধুনিক সুবিধা সহজলভ্য নয়, তাদের কাছে ডাক বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা। গ্রামাঞ্চলে যখন চিঠি বা মানি অর্ডার গ্রাহকের হাতে পৌঁছে, তখন মানুষের মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা যায়, যা একজন ডাক কর্মচারীকে তাঁর কাজের প্রতি আরও অনুপ্রাণিত করে। শহরের দ্রæতগতির জীবনে ই-মেইল, মেসেজিং অ্যাপস থাকলেও গ্রামীণ জনগণের জন্য এখনও ডাক বিভাগের সেবা অবিচ্ছেদ্য। একজন গর্বিত কর্মচারী হিসেবে আমি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডাক সেবায় নিয়োজিত আছি। ডাক বিভাগ শুধু আমার কর্মস্থল নয়, এটি আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বিভাগের সাথে আমার জড়িত থাকার কারণে ডাক বিভাগের গুরুত্ব আমি প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করার চেষ্ঠা করি। আমার অভিজ্ঞতায়, ডাক বিভাগের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত চিঠি নয়, বিভিন্ন সরকারি সেবাও পৌঁছে দেওয়া হয়। অনেক সময় মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ব্যাংক ডকুমেন্টস বা পরীক্ষার ফলাফলও ডাকের মাধ্যমে পৌঁছায়। সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় ব্যাংক, ডাক জীবন বীমা ইত্যাদির মাধ্যমে স্থায়ী/অস্থায়ী আমানত লেনদেন সেবায় নিয়োজিত থেকে ডাক বিভাগ সাধারন জনগনের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সহায়তা করে।
প্রতি বছর ৯ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব ডাক দিবস। ১৮৭৪ সালের এই দিনে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ), যার মাধ্যমে বিশ্বের ডাক ব্যবস্থা এক অভিন্ন কাঠামোর অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে জাতিসংঘের সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো-বিশ্বজুড়ে ডাকসেবার ভূমিকা, গুরুত্ব ও আধুনিকায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এ বছর বিশ্ব ডাক দিবস-২০২৫ এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “জনগণের জন্য ডাক: স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর।” স্লোগানটি ডাক সেবার সার্বজনীনতা ও জনকল্যাণমূলক ভূমিকা নির্দেশ করে। এটি বোঝায়, ডাক বিভাগ মানুষের সবচেয়ে নিকটস্থ সরকারি সেবা-যা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সমানভাবে পৌঁছে দেয় যোগাযোগ, অর্থপ্রেরণ ও তথ্যের সুবিধা। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক ডাক বিনিময় ও ই-কমার্স পার্সেল সেবার মাধ্যমে এটি বৈশ্বিক পর্যায়েও সংযোগ স্থাপন করে। অর্থাৎ, স্থানীয়ভাবে জনগণের সেবাদানের মাধ্যমে ডাক বিভাগ আজ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বার্তা ও পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে-যা একে স্থানীয় ও বৈশ্বিক সেতুবন্ধনের প্রতীক করে তুলেছে। “ডাক সেবা কেবল বার্তা প্রেরণ নয়, এটি মানবিক সম্পর্কের এক চিরন্তন প্রতীক।”
এক সময় ডাক ছিল মানুষের অনুভূতির ভাষা। চিঠি মানেই ছিল আশা, অপেক্ষা ও আবেগের প্রতীক। গ্রামের মাটিতে ডাকপিয়নের সাইকেলের ঘণ্টা বাজলেই ঘরে ঘরে আনন্দের ঢেউ উঠত। কোনো প্রবাসী পুত্রের চিঠি, কোনো প্রেয়সীর প্রেমপত্র কিংবা কোনো শিক্ষার্থীর খোঁজ-সব কিছুই পৌঁছে দিত সেই সাদামাটা খাম। বাংলাদেশের ডাক বিভাগ সেই ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ডাক ব্যবস্থা ছিল বার্তা আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। স্বাধীনতার পর এটি দেশের জনজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে পড়ে।
প্রযুক্তির বিকাশে যোগাযোগ মাধ্যম পরিবর্তিত হলেও ডাক বিভাগের প্রাসঙ্গিকতা কমেনি-বরং নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এখন আর কেবল চিঠি পরিবহনের সংস্থা নয়; এটি আধুনিক যুগের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যে সেবাগুলো চালু রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ই-পোস্ট, ডিজিটাল পোস্টম্যান, ই-কমার্স পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, নগদ-মোবাইল ব্যাংকিং। এই সেবাগুলোর মাধ্যমে ডাক বিভাগ আজ দেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে উঠেছে। নগদ ডাক বিভাগের এক গর্বিত উদ্ভাবন-যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি ডাকঘর রয়েছে, যা দেশের বৃহত্তম সরকারি সেবা নেটওয়ার্কগুলোর একটি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে ডাকঘর এখনও এক ভরসাস্থল। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা বিতরণ, সরকারি অনুদান, বিল পরিশোধ, কৃষি সহায়তা কিংবা বয়স্কভাতা-সবই এখন ডাকঘরের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। বিশেষত ব্যাংকবিহীন এলাকায় ডাকঘরই হচ্ছে জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
যদিও ডাক বিভাগের আধুনিকায়ন এগিয়ে চলছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে- অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, দক্ষ জনবল ও প্রশিক্ষণের অভাব, আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের ঘাটতি, তবে সরকারি উদ্যোগ, বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এই খাতকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ডাক বিভাগ এখন লজিস্টিকস, ব্যাংকিং ও ডিজিটাল আইডেন্টিটি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডাক বিভাগ শুধুই প্রশাসনিক সেবা নয়-এটি এক আবেগ, এক ইতিহাস। যেখানে একখানা চিঠির উষ্ণতা মিশে আছে মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনে, সেখানে ডাক বিভাগের ভূমিকা কেবল প্রযুক্তি নয়, মানবিকতারও প্রতীক। প্রযুক্তির স্পর্শে বদলে গেলেও, ডাকের হৃদয় এখনও মানুষে মানুষে সংযোগের প্রতীক হয়ে আছে। “ডাক বিভাগ হারিয়ে যায়নি, বরং রূপান্তরিত হয়েছে। চিঠির ভালোবাসা এখন প্রযুক্তির প্রেরণায়। বিশ্ব ডাক দিবস আমাদের স্মরণ করায়-যোগাযোগ শুধু তথ্য নয়, এটি মানবতার বন্ধন। সেই বন্ধন রক্ষায় ডাক বিভাগের অবদান চিরকাল অম্লান থাকবে।
একজন ডাক কর্মচারী হিসেবে ডাক বিভাগ আমার জীবনের অংশ এবং এটি প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে। ডাক দিবস আমাদের জন্য কৃতজ্ঞতার দিন এবং একসাথে কাজ করে আরও ভালো সেবা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা পুনরায় করার সময়। আমি আশা করি, ডাক সেবা আগামী দিনে তার যূগান্তকারী স্লোগান- “ডাক সেবার আধুনিকায়ন, গ্রাম-শহরের সম্মিলন” নিয়ে আরও প্রসারিত হবে এবং সবার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
লেখক : মোঃ আব্দুল বাসিত, পোস্টাল অপারেটর, সিলেট বিভাগ।
প্রধান উপদেষ্টাঃ ফয়েজ আহমদ দৌলত
উপদেষ্টাঃ খালেদুল ইসলাম কোহিনূর
উপদেষ্টাঃ মোঃ মিটু মিয়া
উপদেষ্টাঃ অর্জুন ঘোষ
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি