ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে উড়াল সেতুর আশ্বাস উপদেষ্টার

প্রকাশিত: ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে উড়াল সেতুর আশ্বাস উপদেষ্টার

Manual3 Ad Code

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে নামেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এরপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আশুগঞ্জে যানজটে আটকা পড়েন উপদেষ্টা ও তার গাড়িবহর।

 

উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে এই সড়কে তোড়জোড় করে সংস্কারকাজ করা হয়। তবুও যানজটের কবল থেকে রক্ষা করা যায়নি তাঁকে। উপদেষ্টা দীর্ঘ তিন ঘণ্টা আশুগঞ্জ অংশে যানজটে আটকা পড়ে আসা হয়নি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ অংশে। যানজটের কবলে পরে তিনি মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড়ে এসে নাজুক মহাসড়কটি পরিদর্শন করেন।

 

আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ২০২০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়। প্রায় ৫ বছর কেটে গেলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি নির্মাণ।

 

উল্টো নানা জটিলতায় প্রকল্প কাজে ধীরগতি আর জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৩ মাস কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ে মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের। এ অবস্থায় প্রকল্পের আওতায় পড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ চালক ও যাত্রীদের কাছে মহাদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Manual5 Ad Code

এই দুই চত্বরে প্রতিনিয়ত যানজটের কারণে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট রুটের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

Manual6 Ad Code

বুধবার (৮ অক্টোবর) চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের অগ্রগতি ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল অংশ পরিদর্শনে এসে যানজটের কবলে পড়েন খোদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

 

এদিন সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আশুগঞ্জের সোহাগপুরে আটকা পড়েন উপদেষ্টা ও তার গাড়িবহর। বাধ্য হয়ে গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে করে পরিদর্শনস্থলে রওনা হন উপদেষ্টা ফাওজুল। এরপর দুপুর ১টার পর সরাইল-বিশ্বরোড মোড় এসে প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ও বেহাল মহাসড়ক পরিদর্শন করেন তিনি।

Manual7 Ad Code

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারলেন প্রকল্পটির কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

 

তবে নানা জটিলতায় শুরু থেকেই ধীরগতিতে চলছিল নির্মাণ কাজ। এরমধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রকল্পে নিয়োজিত ৩ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ভারতে চলে যায়। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ।

 

মূলত; ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত অংশ চারলেন প্রকল্পের আওতায় পড়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে সরু হয়ে পড়েছে মহাসড়ক।

 

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পড়ার কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়মিত সংস্কার করা যাচ্ছে না মহাসড়কটি। এতে করে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে।

 

বিশেষ করে আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল-বিশ্বরোড় মোড়ে সৃষ্ট গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি হচ্ছে। এর ফলে আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানবাহনগুলোর সময় লাগছে ৪-৬ ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় এ পথ পাড়ি দিতে লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। এছাড়া মহাসড়কে এই ভোগান্তির মাত্রা বৃষ্টির সময় আরও বাড়ে।

 

সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, আশুগঞ্জ গোলচত্বরের পর থেকেই ভোগান্তি শুরু হয় চালক ও যাত্রীদের। গর্তগুলোর কারণে যানবাহনের গতি কমে যায় এই অংশে। ফলে ধীরগতিতে যানবাহন চলায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া গর্তগুলোতে প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। আর বিকল যানবাহন টেনে তুলতে গিয়ে সামনে-পেছনে যানবাহনের জটলা লেগে যাচ্ছে। একই অবস্থা বিশ্বরোড মোড়েরও। গর্তের কারণে হেলেদুলে চলে যানবাহন। মূলত এই দুই চত্বর এখন যানজটের হটস্পট হয়ে উঠেছে।

Manual5 Ad Code

 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকেও মহাসড়কে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। আশুগঞ্জের সোহাগপুর থেকে সরাইলের শাহবাজপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশে যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা।

 

এদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের কারণে চাপ বেড়েছে রেলপথে। ভোগান্তি এড়াতে ট্রেন বেছে নিলেও যাত্রীর তুলনায় আসন সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় ট্রেনেও ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। যাত্রীচাপের কারণে অনেক যাত্রী টিকিট কেটেও ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠে আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না।

 

চারলেন মহাসড়ক প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে চারলেন প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কিছু বেশি। মূলত তিনটি প্যাকেজে প্রকল্পটির কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ (আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়) এর কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক জটিলতায় এই প্যাকেজের অবশিষ্ট কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

 

যদিও ইতোমধ্যে জটিলতা কেটে যাওয়ায় শীঘ্রই কাজ শুরুর আশা সংশ্লিষ্টদের। আর প্যাকেজ-২ (সরাইল-বিশ্বরোড মোড় থেকে তন্তর বাজার) এর কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে মহাসড়কের এক পাশ বন্ধ রেখে আরেক পাশের কাজ করা হচ্ছে। আর প্যাকেজ-৩ (তন্তর বাজার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর) এর কাজ এখনও পর্যন্ত শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-১) মোস্তাকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বেহাল অংশগুলো সংস্কার কাজ চলছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর এবং সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের অংশের কাজ আগামী জানুয়ারির মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা চলছে। পুরো প্রকল্পটির মেয়া ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের বেশি। আশা করা যাচ্ছে বর্ধিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

 

তবে যানজটের কারণ বেহাল সড়ক বরং ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা পালন করা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব। আগে শৃঙ্খলা আনতে হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘এজন্য সড়কে ডিভাইডার করে দিব। এছাড়া বর্ষার কথা চিন্তা করে আশুগঞ্জ গোলচত্বর এবং সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের অংশটুকু ঢালাই করে দেয়া হবে।’

 

পাশাপাশি সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে উড়াল সেতু করার আশ্বাস দেন উপদেষ্টা।

 

যানজটে পড়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে ট্রাফিক শৃক্সখলা থাকলে কোনো অসুবিধা হতো না। আমার হয়তো আধা ঘণ্টা সময় বেশি লাগত। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রধান সমস্যা সড়ক নয়।’

 

তিনি বলেন, ‘সবাই রাস্তা চায়। রাস্তা যেভাবে হবে বাসাবাড়ির জন্য জায়গা থাকবে না, শিল্প কারখানা এমনকি কবর দেওয়ার জন্যও জায়গা থাকবে না। সেজন্য আমাদের সড়কের নির্ভরতা কমিয়ে রেল এবং নৌপথের ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

 

(সুরমামেইল/এমএকে)


সংবাদটি শেয়ার করুন
Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code