নবীগঞ্জে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা: দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০১৬

নবীগঞ্জে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতা: দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

10

সুরমা মেইল নিউজ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি গ্রামে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আল আমিন খানকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। রোববার দুপুরে এ ঘটনার প্রতিবাদে দু‘পক্ষের লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৪০জন আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে ৮ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আব্দুল বাতেন খানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এ ঘটনার পর এলাকায় টানাটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

স্থানীয় সুত্রে জানায়- ৫ম দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে প্রতিদন্ধীতা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বর্তমান মেম্বার (পরাজিত) সৈয়দ নজমুল হোসেন হারুন ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি তরুন ব্যবসায়ী আল আমীন খাঁনসহ আরো ৩ জন প্রার্থী।

নির্বাচনে ৩ প্রার্থী মিলে যে ভোট পায় তার চেয়ে ও বেশি ভোট পেয়ে আল আমীন খাঁন মেম্বার পদে নির্বাচিত হয়। এতে হারুন মেম্বারের লোকজন চরম ভাবে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন সাধারন ভোটারদের উপর।

এ রকমই একটি ঘটনা গ্রামের ইলিয়াছ মিয়ার ছেলে জিলাদ মিয়া নামে এক যুবককে গত কিছু দিন পুর্বে হারুন মেম্বারের চাচাতো ভাই সম্পর্কে লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা রানা মিয়া চৌধুরী ভোট না দেয়ার কারনে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

এক পর্যায়ে জিলাদ নব-নির্বাচিত মেম্বারসহ গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বিয়ানদের বিষয়টি অবগত করে রাখে। এ দিকে এ অবগতের খবর পেয়ে লন্ডন প্রবাসী রানা চৌধুরী আরো ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। এ ঘটনার পর বর্তমান মেম্বার ও পরাজিত মেম্বারের লোকজনের মধ্যে প্রকাশ্য বিরুধের রুপ নেয়।

এরই সুত্রে রবিবার সকাল ১১ টার দিকে আল আমীন খান নবীগঞ্জে তার ব্যবসা প্রতিষ্টানে যাওয়ার উদেশ্যে কুর্শি বাস ষ্ট্যান্ডে আসা মাত্রই আগে থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওৎ পেতে থাকা রানা চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন লোক আল আমীন খানকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে।

ঘটনার খবর পেয়ে আল আমীন খানের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দু‘পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০জন লোক আহত হয়। রনক্ষেত্রে পরিনত হয় কুর্শি গ্রাম।

Nabiganj-Pic-3-768x570

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের গুরুতর আহতরা হল, নব-নির্বাচিত মেম্বার আল আমীন খাঁন (৩০), নজরুল খাঁন (৩৫), গোলেমান খাঁন (৫৫), সুলেমান খাঁন (৫০), জাবরুল খাঁন (২৫), ইমরান খাঁন (২৬), লিয়াকত খাঁন (৩০), হেলাল খাঁন (৩২), দুলাল খাঁন (২৮), ইমন খাঁন (২২), বকুল খাঁন (৩০),  লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা রানা চৌধুরী (৫৫), তার ভাই মতি চৌধুরী (৫০) ও মহশিন চৌধুরী (৪৮), সবুর মিয়া (৪০), শহিদ উল্লাহ (৭০), কছির মিয়া (৬০)। এদের মধ্যে  ৮ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আল আমীন খাঁনের উপর এ হামলার প্রতিবাদে নবীগঞ্জ শহরের স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে নব-নির্বাচিত মেম্বার ও হামলায় আহত আল আমীন খান এর চাচাতো ভাই গোলেমান খাঁন জানান, হারুন মেম্বার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সে এবং তার চাচাতো ভাই রানা চৌধুরী বেপরোয়া হয়ে সাধারন মানুষ কে ভয়ভীতি ও মারধোর করছে। জিলাদ নামে এক যুবককে হামলার প্রতিবাদ জানালে রানা চৌধুরীর নেতৃত্বে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল আমীন খাঁনের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এবং ধরালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে।

এ ব্যাপারে পরাজিত মেম্বার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সৈয়দ নজমুল হোসেন হারুন এ ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে বলেন আমি অসুস্থ মানুষ ঘটনার সময় আমি আমার বাড়ীতে ছিলাম। তিনি বলেন, এটা নির্বাচনী কোন সংঘর্ষ নয়। এটা একটি বাড়ী নিয়ে রানার সাথে আল আমীনের লোকদের সংঘর্ষ হয়েছে।

আল আমীনের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, রানার সাথে আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই, আমি হলাম সৈয়দ বংশের আর রানা হলেন চৌধুরী বংশের লোক। তবে আমাদের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু এ সংঘর্ষের সাথে আমি জড়িত নই।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com