নবীগঞ্জে ভিসির সংর্বধনায় গিয়েও মঞ্চে স্থান পাননি আ’লীগ নেতা মুকুল

প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

নবীগঞ্জে ভিসির সংর্বধনায় গিয়েও মঞ্চে স্থান পাননি আ’লীগ নেতা মুকুল

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহকে গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের উপস্থিতি নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। যদিও অনুষ্ঠানে গিয়েও মঞ্চে স্থান পাননি আ’লীগ নেতা মুকুল।

 

অনুষ্ঠানকে দোসরমুক্ত করতে স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাকর্মী কর্তৃক হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও অনুষ্ঠানস্থলে আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ তনুজ রায় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের খুটির জোর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

 

জেলা প্রশাসকের বরাবর দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দিনারপুর কলেজে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অতিদ্রুত বন্ধ, দিনারপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে স্বৈরাচারের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের নাম সম্বলিত প্রস্তাবিত তালিকা দ্রুত বাতিল করা, তালিকা প্রেরণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুষ্ঠানে ইমদাদুর রহমান মুকুলের নিমন্ত্রণ বাতিল নিশ্চিত করতে হবে।

 

এছাড়াও ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে আবেদন করা হয়।

 

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়- জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার প্রাণের বিনিময় নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর কলেজ ইতিমধ্যে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হওয়ার প্রাথমিক অনুমতি পেয়েছে। দিনারপুর ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি-বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাবর একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। অতি পরিতাপের বিষয় এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইমদাদুর হমান মুকুলের নাম প্রস্তাব করে দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় স্বাক্ষরিত একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। যা অত্যান্ত উদ্বেগজনক ঘটনা।

 

এছাড়াও বৃহস্পতিবার দিনারপুর কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহকে গণ সংবর্ধনা ও সুধি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। উক্ত সমাবেশে অতিথি হিসেবে ইমদাদুর হমান মুকুলকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। মুকুলকে অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করা মানে জুলাই-আগস্টে ছাত্রজতার তাজা রক্ত এবং প্রাণের বিনিময় পাওয়া নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থি এবং আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসন করার সু-পরিকল্পিত প্রক্রিয়া করা বলে মনে করছেন ছাত্র নেতারা।

 

জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দাখিল এর পরেও গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বীরদর্পে হাজির হন পতিত স্বৈরাচারের অনুসারী ইমদাদুর রহমান মুকুল। তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যান শিক্ষার্থী ও অতিথিবৃন্দ।

 

অনুষ্ঠানে থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানান- তোপের মূখে মুকুলকে মঞ্চে উঠতে দেয়ানি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ অধ্যক্ষ তনুজ রায়ের ঘনিষ্ঠজন মুকুল অবশেষে মঞ্চের পেছনে গাছ তলায় একটি চেয়ারে ভারাক্রান্ত মনে বসে থাকতে দেখা যায়।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরদের অভিযোগ- কোনো আওয়ামীলীগ নেতাকে যাতে অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেয়া হয় এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ নিজে কলেজ অধ্যক্ষ তনুজ রায়কে নির্দেশনা দেন। তারপরও অনুষ্ঠানে একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নিমন্ত্রনের পেছনে নবীগঞ্জ উপঝেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আশরাফ আলী ও গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলমের সায় ছিল বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রআন্দোলনের নেতারা। অন্যদিকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন কোন পথে হাটছেন তনুজ রায়। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া আমলনামাও খতিয়ে দেখার পরামর্শ স্থানীয়দের।

 

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বক্তব্য নিতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

 

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম আমানুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- রাজনীতির নামে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি গ্রহন করা হবেনা।

 

তিনি আরও বলেন- স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও রাজনীতির কারণে আকাশ থেকে গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করা হয়। যা গ্রহণ যোগ্য নয়। ২০ কোটি মানুষের মাঝে ৫কোটি মানুষকে মানবসম্পদে গড়ে তুলতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সমাজে বৈষম্য গ্রহন করা হবেনা। সবার প্রচেষ্টায় বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

 

কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামাতের আমীর মাওলানা আশরাফ আলী, গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সফিউল আলম, কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায়। অনুষ্ঠানে উপাচার্যকে কলেজের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র প্রদান করা হয়।

 

(সুরমামেইল/এসসি)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com