নবীগঞ্জে লাইসেন্সবিহীন চলছে ৪টি হাসপাতাল

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৫

নবীগঞ্জে লাইসেন্সবিহীন চলছে ৪টি হাসপাতাল

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৪টির লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্যে- বেআইনীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস বলেছেন, লাইসেন্স না থাকলে কোন অবস্থায় বেসরকারী হসপিটাল বা ডাযাগনষ্টিক সেন্টার চালানোর বিধান নেই। ডাযাগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল নাম দেয়া সম্পূর্ন নিষেধ। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের কোন ধরনের ফি বা জরিমানা দিয়ে ক্লিনিক চালানো বিধান নেই। অনেকেই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হসপিটাল বা মিনি হাসপাতাল নাম দিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন। বিষয়টি নজরে আসছে না স্বাস্থ্য বিভাগের কারোই। এবিষয়ে বলেছেন, তারা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।

 

এদিকে, চলতি অর্থবছরের দুই তৃতীয়াংশ সময় পার হয়ে গেলেও এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। ইদানিং যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে মিনি হসপিটাল। একই লাইসেন্সের দুই থেকে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করার অভিযোগ রয়েছে।

 

নবীগঞ্জ এলাকায় ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল নামে তিনটি শাখা রয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন একই লাইসেন্সের মাধ্যমে তিনটি হাসপাতাল চালানো হচ্ছে। ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নামে পুনাঁঙ্গ হসপিটাল নাম দিয়ে চালানো হচ্ছে তিনটি শাখা। এরকম ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গজিয়ে হাসপাতাল নিয়ে রোগীরা পড়ছেন নানা রকম জটিলতায়। রোগীদের কাছে থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি। ইউনাইটেড হসপিটালে আসা একজন রোগী আব্দুল মালিক জানান, এখানে গলাকাটা ব্যবসা হচ্ছে। রোগিদের অতিরিক্ত টেষ্ট দেয়া হয়। ফি বেশি নেয়া হয়।

 

আউশকান্দি কেয়ার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আসা রহিমা বেগম বলেন, আমাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসার পর ডাক্তার রোগী দেখার আগেই তিন হাজার টাকার টেষ্ট তার সহকারী দিয়ে দেন, বলেন এগুলো তাদের এখানে করার পর ডাক্তার রোগি দেখবেন।

 

স্থানীয় সচেতন মহলের প্রশ্ন- লাইসেন্স নবায়ন না করেই কিভাবে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান চলছে এবং কোন দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নিবে? যদিও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে- যেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই তাঁরা নবায়ন ফি জমা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

 

নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব (একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনস্টিক সেন্টার) হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নবীগঞ্জ উপজেলায় ১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে পৌর শহরের হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতাল, আউশকান্দি বাজারের কেয়ার মেডিকেল সার্ভিসের লাইসেন্স ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নবায়ন করা হয়নি । ফলে একদিকে জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে। অন্যদিকে মানা হচ্ছে না সরকারের বিধি নিষেধ।

 

এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্থানীয় সচেতন কয়েকজন বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মত গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কিভাবে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে? লাইসেন্সের মেয়াদ চলে যাওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ হয়ে যায়। নিয়ম অনুসারে যতদিন পর্যন্ত নতুন করে লাইসন্সে না পাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কিন্তু যারা এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে তারা যদি দিব্যি সেখানে বসে প্র্যাকটিস করেন তাহলে ব্যবস্থা কে নিবে?

 

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত লাইসন্সে নবায়ন করতে পারেনি তাঁরা সরকারি নবায়ন ফি জমা দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

 

তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইসন্সে নবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই হাসপাতাল অবৈধ হয়ে যায়। বিষয়টি আমরা কঠোর ভাবে দেখব।

 

তিনি বলেন, যারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল নাম দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরও বলেন এক নামে লাইসেন্স নিয়ে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হসপিটাল চালানো সম্পূর্ন নিষেধ রয়েছে।

 

যোগাযোগ করা হলে হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহকারি ব্যবস্থাপক অমিত বলেন, এ সব বিষয়ে আমি বলতে পারব না, ব্যবস্থাপক বলতে পারবেন। এই দুই কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন। পরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

একইভাবে এ ব্যাপারে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান নবীগঞ্জ ডিজিটাল ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হটলাইন নাম্বারে কল রিসিভ করা ব্যক্তি।

 

নবীগঞ্জ ইউনাইডেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হসপিটালের পরিচালক মাহবুবুল আলম সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে রিসিভশনের ফোনে বলা তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।

 

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন রত্ন দেব বিস্বাস বলেছেন, লাইসেন্স না থাকলে কোন অবস্থায় বেসরকারী হসপিটাল বা ডাযাগনষ্টিক সেন্টার চালানোর বিধান নেই। ডাযাগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল নাম দেয়া সম্পূর্ন নিষেধ। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের কোন ধরনের ফি বা জরিমানা দিয়ে ক্লিনিক চালানো যায় না। একই লাইসেন্সে নামে অধিক হসপিটাল চালানোর কোন বিধান নেই।

 

(সুরমামেইল/এমএএ)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com