পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০১৬

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান

Manual4 Ad Code

downloadসুরমা মেইল নিউজ : বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পশ্চিমাকালে শাওয়ালের নতুন চাঁদ উঠার পরই শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। এ আনন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য এক অপূর্ব উপহার। এ আনন্দ ছোট-বড়, ধনী-গরীব সবার। আনন্দঘন এ মুহূর্তে আপনাদের সবাইকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

পশ্চিমাকাশে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখে আপনাদের মনে খুশির অন্ত নেই, আনন্দের শেষ নেই। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক- ঈদের আগমন কেন এত খুশী ও আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে? এ জিজ্ঞাসার জবাব দিতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ঈদের চাঁদ লিখেছেন-

খ) (দেখ) হযরতের হাসির ছটা ঈদের চাঁদে জাগে

সেই চাঁদেরই রং যেন আজ সবার বুকে জাগে।

এ কবিতা থেকেই বুঝতে পারা যায় যে, কেন ঈদের চাঁদ উঠলেই সবার মনে খুশীর শিহরণ জাগে! আসলে মহানবী (সা.) নামায, ইবাদত ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে এ দিনটি পালন করতেন। আর সেই ধারাবাহিকতায় সারাবিশের মুসলমানরা হিংসা-বিদ্বেষ ও বৈষম্য ভুলে মেতে ওঠেন ঈদের আনন্দে।

ঈদুল ফিতর সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনলেও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এদিন আনন্দের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকেই তাদের জামা, জুতো কেনার ধুম পড়ে যায়। আর ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে তাদের সেকি আনন্দ! দলবেঁধে তারা বাড়ীর ছাদে, ওঠোনে কিংবা রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের নতুন জামা-কাপড়ের প্যাকেট খুলে বারবার দেখে এবং ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখে। তাদের ধারণা নতুন জামাকাপড় কেউ দেখে ফেললে তা আর নতুন থাকবে না, পুরোনো হবে যাবে। কেউ যদি কখনো দুষ্টুমী করে বলে যে তোমার জামা দেখে ফেলেছি, অমনি তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ সময় বড়রা এসে শান্ত করেন। এমনি হাসি কান্না আর আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে শিশুরা নতুন সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে তাদের মোটেই কষ্ট হয় না। বরং তাদের কোলাহলে আর চেঁচামেচিতে বাড়ীর বড়দের ঘুম ভাঙে।

প্রখ্যাত কবি খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন ঈদের দিন শিশু-কিশোরদের আনন্দের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে-

সবার দুয়ার খোলা আজি

কোথাও নেই মানা,

খাঞ্চা ভরে বিলাবো আজ

নানা রকম খানা।

অন্যদিকে, ইরানের বিখ্যাত মরমী করি জালালউদ্দিন মোহাম্মদ রুমি ঈদ সম্পর্কে লিখেছেন-

ঈদ এল ঐ ঈদ এল ঐ ঈদ এল

ঈদের সাথে শান্তি সুখের আবেশ এল

ঢোল-তবলা বাজাও আজি ছড়াও খুশির রেশ

আনন্দেরি ঈদ এসেছে পেরিয়ে সকল দ্বেষ।

সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলিয়ে দিতে আকাশের বুক থেকে নেমে এসেছে মহাখুশির ঈদ। ঈদের আগমনে চারিদিকে সাড়া পড়ে গেছে। ফুল-পাখিদের মধ্যেও যেন আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। জান্নাতি সুখের আমেজ নিয়ে আমাদের মাঝে যে ঈদ এসেছে তা মূলত রোযাদারদের পুরস্কার প্রাপ্তির দিন। ঈদের চাঁদ দেখার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি দোয়া পড়তেন, দোয়াটির অর্থ হলো- “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য এই চাঁদকে সৌভাগ্য ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আল্লাহই আমার ও তোমার রব।” অন্যদিকে, আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে- যেই দিনটিতে কোনোরকম পাপকাজ করা হবে না, সেই দিনটিই ঈদের দিন।

২য় হিজরীর ১৭ই রমজান মক্কার কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদরের প্রান্তরে সংঘটিত হওয়ায় এ যুদ্ধকে বদরের যুদ্ধ বলা হয়। এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান সাহাবী শত্রুপক্ষের এক হাজার সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার মাত্র ১২ দিন অর্থাৎ ২৯ রমজান সন্ধ্যাবেলা শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পেয়ে রাসূলে খোদা ঘোষণা দিলেন, আগামীকাল ঈদুল ফিতর। এরপর থেকে প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে।

আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগে শুরু হলেও ঈদ উৎসবকে কখনো পুরনো ঊৎসব বলে মনে হয়নি। প্রতিটি ঈদের দিনই মুসলমানদের মনে থাকে খুশির আমেজ। ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়ে তারা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কোলাকুলিসহ সালাম বিনিময় করে থাকে। দেশ-জাতি তথা মুসলিম উম্মাহ ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মহামিলনের জয়গান গায়। এ দিনটি রোজাদারদের জন্য আরও খুশির দিন; পুরস্কার প্রাপ্তির দিন। কারণ রমজান মাসে সিয়াম সাধনার প্রতিদান মহান আল্লাহ এ দিনেই দিয়ে থাকেন। সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজে ঈদ আসে জাতীয় মিলনের প্রেরণা নিয়ে। তা সবার হৃদয়ে বুলিয়ে দেয় প্রেম, প্রীতি, আনন্দ আর শান্তির পরশ।

Manual8 Ad Code

ঈদের দিন সবার বাসায় নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মজার মজার খাবার তৈরির রেসিপিও প্রচার করা হয়। এসব শুনতে শুনতে অনেকেরই তা মুখস্ত হয়ে যায়। কোনো ছাত্র যদি খাবার তৈরির রেসিপি অনুযায়ী পরীক্ষা খাতায় উত্তর লিখে তাহলে কেমন হদে পারে -ভেবে দেখেছো? এত ভাবাভাবির দরকার নেই এবার এক ছাত্রের মশা মারার পদ্ধতি নিয়ে একটি কৌতুক শোনা যাক:

এক পরীক্ষায় প্রশ্ন আসলো : একটি মশা কিভাবে মারতে হয়? একনিষ্ঠ ছাত্র বল্টু উওরে লিখল: প্রথমে একটি বাটিতে মরিচের গুড়া নিয়ে তাতে পানি দিয়ে গুলিয়ে রাখুন। মশা তা রক্ত মনে করে খেতে আসবে। এই মরিচ গুলানো পানি খেয়ে মশার ঝাল লেগে যাবে। সে তখন পানি খেতে যাবে। পানি খেতে আসলেই আপনি মশাটিকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিন। তারপর একস্থানে আগুন জ্বালান, ভেজা মশা আগুনের কাছে আসবে নিজেকে শুকাতে। এবার আপনি আবার ধাক্কা দিয়ে মশাটিকে আগুনে ফেলে দিন।

তারপর যে হাসপাতালে মশাটি ভর্তি হয়েছে সেখানে যাবেন। এবার চুপি চুপি মশার মুখের অক্সিজেন মাস্কটি খুলে ফেলুন। ব্যাস আপনার কাজ শেষ, মশাটি মরে যাবে!

রান্নার রেসিপির প্রভাব পরীক্ষার খাতায় পড়লে কেমন হতে পারে- এই কৌতুকটি থেকে তা বুঝতে পারলেন। তবে, ঈদ কেবল আনন্দের জন্য আসে না, ঈদ আসে পরস্পরের কল্যাণ কামনার জন্য। তাইতো ঈদের দিন দেখা যায় সবাই নিজ পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ বিশ্বে শান্তির জন্য দেখা করে থাকে। আমাদের সবারই উচিত ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাকসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানের জন্য দোয়া করা, তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা এবং তাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো। ঈদুল ফিতর আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়ার জন্য প্রতি বছর হাজির হয়। কবি গোলাম মোস্তফার কথায়-

এনেছে নব-গীতি, এনেছে সুখ-স্মৃতি, এনেছে প্রেম-প্রীতি-পুণ্য,

এনেছে নব-আশা, একতা ভালোবাসা, নিবিড় মিলনের জন্য,

ভ্রাতৃ-প্রণয়ের মহান দৃশ্য!

Manual4 Ad Code

মিলন-কলগানে মুখর বিশ্ব!

Manual1 Ad Code

বিভেদ-জ্ঞান যতো আজিকে সব হত

ধন্য ঈদ তুমি ধন্য!

হৃদয়ের সব পাপ-কালিমা মুছে দিতে ঈদে এসেছে। আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে গুণাহ মাফের জন্য দোয়া করব এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে দেব এই প্রত্যাশা রইল।

(পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেডিও তেহরানের রংধনু আসরের বিশেষ অনুষ্ঠান)

 

Manual3 Ad Code

সংবাদটি শেয়ার করুন
Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code