সিলেট ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৫
সুরমা মেইলঃ পরীক্ষা ছাড়া প্রথম শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তি করানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ছাপানো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করতে হবে, তা নয়। যে এলাকায় যে বসবাস করে, সে এলাকায় ভর্তি হওয়া তার অধিকার। সরাসরি তাদের আগে ভর্তি করিয়ে নিতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রোববার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অডিটোরিয়ামে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু, সমাজকল্যাণ এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্যই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এটা যেন সমন্বয় করা হয়। তারা যেন লক্ষ্য রাখেন কাজগুলো ঠিক মতো হচ্ছে কিনা।’
‘তারা যদি লেখাপড়া শিখে ছাপানো প্রশ্নপত্র পড়ে পরীক্ষায় উত্তর দিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে তাহলে আর স্কুল কী শেখাবে? প্রাক প্রাইমারি বা প্রাইমারি তাদের কী শেখাবে?’
পড়াশোনা মানে একগাদা বই চাপিয়ে দেওয়া নয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য আজকাল আমাদের দেশে, যেমন এই ঢাকা শহরে দেখি এত ফ্ল্যাট বাড়ি হয়েছে, তাদের খেলাধুলার জায়গা রাখা হয় না। এই ফ্ল্যাট বাড়িতে থেকে বাচ্চারা ওই ফার্মের মুরগির বাচ্চার মতো মানুষ হচ্ছে।’
‘আমি সব সময় বলতাম, আপনারা অন্তত বাচ্চারদের জন্য খেলার জায়গাটা রাখবেন। বাচ্চারা যেন খেলাধুলা করতে পারে, তাদের হাত পা ছড়াতে পারে।’
লেখাপড়ার জন্য আনন্দঘন পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের লেখাপড়া শেখাতে পাঠানো মানে এক গাদা বইয়ের বোঝা কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে তাদের সারাক্ষণ পড়ো পড়ো এর ওপরে রাখা, এটা কিন্তু কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।’
‘আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, কাউকে সারাক্ষণ পড়ো পড়ো বললে তাহলে পড়া থেকে মনটা উঠে যায়। আমি আমার ছোট বেলার কথা বলতে পারি, যখনই বলতে এই পড়তে বস, তখনই আর পড়তে ইচ্ছে করতো না।’
‘কিন্তু মানুষ যদি উৎসাহিত করে এই পড়াটা তোমার দায়িত্ব, পড়তে হবে, এই পড়াটা শেষ করতে পারলেই তুমি খেলতে পারবে। তখন কিন্তু সময় লাগে না। খুব তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে খেলা যায়।’
প্রত্যেকটা স্কুলে খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
শিশুদের শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক হিসাব এসেছে, ৩৪ লাখ শিশু নাকি ঢাকার রাস্তায় ঘুরে। এখানে আমাদের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আছে। এই দুই মন্ত্রণালয়কে আমি নির্দেশ দিচ্ছি, একটি শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। একটা শিশুও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে না।’
শিশু ও মায়েদের খাদ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
বক্তৃতায় সারা দেশের সকল শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ছোট বেলার কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টা ছিল খালের ওপারে। পুল পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। আমার আব্বা জেলখানায় বছরের পর বছর। আমার দাদি সব সময় আমাদের ব্যাপারে চিন্তা করতেন। সোজা বলে দিলেন, পুল পার হয়ে স্কুলে যাওয়া লাগবে না। ঘরে বসে পড়বি। ঘরে মাস্টার, পণ্ডিত, আরবি পড়ার শিক্ষক ছিল। কাজেই আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ।’
‘দাদিদের মনে তো এই দুশ্চিন্তাটা থাকে। আমি তো এখন দাদি হয়েছি, নানি হয়েছি, কাজেই আমার এই দুশ্চিন্তা শিশুদের নিয়ে আছে।’
গৃহকর্মী শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় আমার দেখলে। অনেক সময় অনেক শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় কাজের জন্য। সেই শিশুদেরও লেখাপড়ার অধিকার রয়েছে। তাদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া। অমনি তাদের মারা অত্যাচার করা। মানুষ এভাবে এতো নির্দয় হয় কীভাবে? আমি এটা ভেবে পাই না।’
‘কোনোভাবেই শিশুদের ওপর নির্যাতন মেনে নেওয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে হবে। শিশুদের দিয়ে কোনো ঝুঁকি পূর্ণ কাজ করানো যাবে না। শিশুদের কাজ পড়াশোনা করা।’
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সবাইকে সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্ম থেকে হয়তো অনেকের শারীরিক সমস্যা থাকে। এটা তাদের অপরাধ নয়। এ ধরনের শিশুদের তোমরা আদর করবে, যত্ন করবে, বন্ধুসুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করবে। তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা কখনো করবে না। বাবা মায়েদের বলবো, তারা যেন শিশুদের সেভাবে শিক্ষা দেন।’
প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সিলের ওপর গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম প্রমুখ।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি