বাহুবলে ৪ স্কুলছাত্র খুনের রহস্য উদঘাটন: আদালতে আসামী রুবেলের জবানবন্দি

প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬

বাহুবলে ৪ স্কুলছাত্র খুনের রহস্য উদঘাটন:  আদালতে আসামী রুবেলের জবানবন্দি

hobigonj
সুরমা মেইল নিউজ : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ৪ স্কুলছাত্র লোমহর্ষক খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরধরেই এ আলোচিত খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে ৬ জন। ৪ শিশু হত্যার প্রধান আসামী আব্দুল আলীর ছেলে রুবেল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই লোমহর্ষক খুনের বর্ণনা দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আটক আসামী রুবেল মিয়াকে হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খন্দকারের আদালতে হাজির করা হলে সে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আসামী রুবেল মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। তাকে গত বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। শুক্রবার রুবেল মিয়ার সাথে আটক আসামী আরজু মিয়া ও বশির মিয়াকেও আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে তা শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়। আসামী রুবেল মিয়া (১৯) ইতিপুর্বে আটক আসামী আব্দুল আলী (৫৫) ওরফে বাগল এর পুত্র এবং আসামী জুয়েল মিয়ার ভাই। আসামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান উপলক্ষে শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস বিফ্রিং অনুষ্টিত হয়। এতে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, মুলত গ্রাম্য পঞ্চায়েত নিয়ে আব্দুল আলী বাগল ও খালিক মাস্টারের বিরোধ এবং সর্বশেষ গত ১মাস পূর্বে গাছের ডাল কাটা নিয়ে উভয় পক্ষের শত্রুতার জের হিসেবে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শিশুদেরকে হত্যা করা হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার খেলার মাঠ থেকে বিকেলে শিশু তাজেল (১০), মনির (৭), ইসমাইল (৭), জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮) কে রুবেলের আত্মীয় বাচ্চু মিয়ার সিএনজি অটোরিক্সাযোগে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর চেতনা নাশক ঔষধ ব্যবহার করে তাদেরকে অজ্ঞান করে বাচ্চুর গ্যারেজে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ঐদিনই তাদেরকে হত্যা করা হয়। এবং পরে গভীর রাতে বস্তায় করে লাশ নিয়ে ইছাবিল নামকস্থানে বালু চাপা দিয়ে রাখা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, কিলিং মিশনে ৬জন আসামী অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে রুবেল স্বীকারোক্তি দিয়েছে এবং আরজু কেও রিমান্ডে নেয়ার প্রার্থনা জানানো হয়েছে। বাকী ৪ জনের নাম তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রকাশ করেননি। এসপি বলেন, আসামী আব্দুল আলী বাগলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিশু অপহরণ কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিক্সা, রক্তমাখা একটি পাঞ্জাবি ও বস্তা আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সিএনজি অটোরিক্সা চালক বাচ্চু মিয়া পলাতক। তিনি বলেন ঘটনার পরপরই ডিবি, ডিএসবি সহ পুলিশের বড় একটি দল ঘটনাস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গোপন সুত্রে সংবাদ সংগ্রহ ছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামীদেরকে আটক করতে সমর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ১ আসামী স্বীকারোক্তি দেয়ায় আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশ সুপার বলেন, আরো তদন্ত শেষে চার্জশীট দেয়া হবে। এতে আসামীদের বিচার নিশ্চিত হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহীদুল ইসলাম, এএসপি সদর মাসুদুর রহমান মনির সহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। উল্লেখ্য, বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র মোঃ তাজেল মিয়া (১০), ২য় শ্রেণীর ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮) এবং ১ম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ মনির মিয়া (৭) এবং স্থানীয় আনোয়ারুলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার ১ম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল (৭) গত ১২ ফেব্রুয়ারী নিখোজ হওয়ার পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারী গ্রামের নিকটবর্তী ইসাবিল নামকস্থান থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। সুন্দ্রাটিকি গ্রাম এখন শোকাচ্ছন্ন। মৃত শিশুদের বাড়িতে এখনো আত্মীয় স্বজন কান্নাকাটি করছেন। এলাকাবাসী হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com