ভারতীয় ক্রিকেটের দ্যা মাস্টার অব কামবেকস আর নেই

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫

ভারতীয় ক্রিকেটের দ্যা মাস্টার অব কামবেকস আর নেই

jagmohon dalmia

সুরমা মেইলঃ জগমোহন ডালমিয়া। এই নাম এমন একজনের, যিনি মিশে আছেন আধুনিক ক্রিকেটের প্রতিটা ভাঁজে। যার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের রয়েছে এক নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বিশ্ব ক্রিকেটের চেহারাও তিনি পাল্টে দিয়েছিলেন। ডালমিয়া যেন ক্রিকেটেরই সমার্থক এক নাম।

রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দিনগত রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৫ মিনিট) কলকাতার বিএম বিরলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ডালমিয়ার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে বুকে ব্যথা ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অনুভব করলে ডালমিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তার এঞ্জিওপ্লাস্টি করানো হয়। এর পর থেকে তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে বলে জানিয়েছিলেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, রোববার সন্ধ্যার পর ফের অবস্থার অবনতি হয় ডালমিয়ার। এর কিছু পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

গুণগ্রাহীরা বলে থাকেন, ‘ডালমিয়া’ ক্রিকেটেরই সমার্থক একটি নাম। বর্ণাঢ্য জীবনে দায়িত্ব পালন ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি খুব কমই বিরোধের মুখে পড়েছেন।

১৯৪০ সালের ৩০মে জগমোহন ডালমিয়া কলকাতার এক মারওয়াড়ি পরিবারে জন্ম নেন। স্কটিশ চার্চ কলেজে লেখাপড়া শেষে তিনি পেশাদার ক্রিকেটে প্রবেশ করেন। তবে ছাত্রজীবনে থাকতেই তার এ খেলায় হাতেখড়ি। পেশাদারী ক্রিকেটে উইকেটকিপার হিসেবে তার যাত্রা শুরু। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বেরিয়ে তিনি কিছুদিন স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে খেলেন।

পরবর্তীতে বাবার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমএল ডালমিয়া অ্যান্ড কো.-তে যোগদান করেন। ধীরে ধীরে এই প্রতিষ্ঠানকে তিনি ভারতের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন।

জগমোহন ডালমিয়া ১৯৮৩ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। কালক্রমে তিনি নিজেকে এমন স্থানে নিয়ে যান, এক সময় বড় আসরে তিনিই যেন ভারতের প্রতীকে পরিণত হলেন। বিসিসিআই’র কোষাধ্যক্ষ হওয়ার পর যেন ভারতেরই ভাগ্য বদলে দিলেন তিনি। ইন্দরজিৎ সিং বিন্দ্রাকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের পুরো আলোটা যেন এনে ফেললেন উপমহাদেশের ওপর। এরই ধারায় ১৯৮৭ সালে ও ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ ভারত।

১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরের সফল আয়োজনের পর ডালমিয়ার দৃষ্টি যেন আরও প্রসারিত হলো। সে বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়লেও হেরে গেলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকম গ্রে’র কাছে। ১৩ ভোট কম পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বছর, ১৯৯৭ সালে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হলেন। এ যেন শুধু একজন উপমহাদেশীয়, একজন ভারতীয়র জয় নয়, বিশ্ব ক্রিকেটে শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান ঘটিয়ে একজন ডালমিয়ার জয়।

আ‌ইসিসি’র প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন শুরুর পর পরবর্তী তিন বছরে ডালমিয়া যেন বিশ্ব ক্রিকেটের চেহারাটাই পাল্টে দিলেন। সেই সঙ্গে ভারতকে পরিণত করলেন ক্রিকেট কেন্দ্রে। শুধু তাই নয়, ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশও পেল অনেক আকাঙ্ক্ষার টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা।

শুধু বাংলাদেশ বা ভারতের ক্রিকেটই নয়, ডালমিয়ার কাছে ঋণী শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকাও। ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন সন্ত্রাস আতঙ্কে শ্রীলঙ্কা সফর বাতিলের ঘোষণা দেয়, তখন তিনি ভারত ও পাকিস্তান দলকে সেখানে খেলতে যেতে রাজি করান। আর এতেই যেন জাদু দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।

১৯৯১ সালে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর থেকে বয়কট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তখন ডালমিয়া দলটির ভারত সফরের ব্যবস্থা করেন। আর এভাবেই নতুন করে যাত্রা শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের।

২০০৬ সালে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হলে ও অভিযোগ উঠলে জগমোহন ডালমিয়াকে বিসিসিআই থেকে সরানো হয়। তবে ক্রিকেটকে সরানো যায়নি তার মন থেকে। এরই ধারায় ২০১৩ সালে ফের দৃশ্যপটে হাজির হলেন তিনি। এন শ্রীনিবাসনকে সরিয়ে বিসিসিআই’র অন্তঃবর্তী প্রেসিডেন্ট করা হয় তাকে।

ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ এই ক্ষণজন্মা তার অবদানের জন্য জয়ও করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। ২০০৫ সালে ডালমিয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব দ্য হিস্টোরি অব স্পোর্টস অ্যাচিভমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড জয় করেন।

এছাড়া ১৯৯৬ সালে বিবিসি তাকে বিশ্বের সেরা ছয় ক্রীড়া নির্বাহীর একজন হিসেবে ঘোষণা দেয়।

গুণগ্রাহী ও গণমাধ্যমে বহু নামেই ডালমিয়াকে ডাকা হতো। এর মধ্যে ‘মেকিয়াভেলি অব ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’, ‘মাস্টার অব রিয়ালপলিটিক’, ‘দ্য মাস্টার অব কামবেকস’ উল্লেখযোগ্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com