ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাষন্ড পিতা আটক

প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৬

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাষন্ড পিতা আটক

press-photo-04-10-2016-600x398সুরমা মেইল নিউজ :: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে চাঞ্চল্যকর সাত মাসের শিশু ইফা হত্যা ও অপর শিশু কন্যা রিফাকে গুরুতর আহতকারী পিতাকে আটক করেছে র‌্যাব-৯। সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ১০ মিনিটে র‌্যাব-৯, স্পেশাল কোম্পানী, সিলেট ক্যাম্পের একটি চৌকস আভিযানিক দল এএসপি মোহাম্মদ জিয়াউল হক এর নেতৃত্বে¡ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় সময় সিলেট জেলার বীরশ্রী, জকিগঞ্জ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

অভিযানে গত ২১ আগস্ট চুনারুঘাট থানার দক্ষিণ জারুলিয়া গ্রামে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজের ৭ মাসের শিশু ইফাকে হত্যার প্রধান আসামী পাষন্ড পিতা মোঃ আব্দুল শহীদ লিটনকে (৩০) আটক করা হয়।

লিটন ও তার ভাইয়েরা অন্যের বাড়ীতে কাজকর্মসহ মাছ ধরা ও বিক্রয় পূর্বক জীবিকা নির্বাহ করে। হাওরের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে আঃ রউফ, সোহেল, রফিকদের সঙ্গে ঘাতক লিটন বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ আঃ রউফ ও তার সহযোগীগণ ঘটনার পূর্বে ঘাতক লিটনের বাড়ী ঘেরাও করে এবং এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তার বাড়ীতে আক্রমণ করে। এই সময় ঘাতক লিটনের সৎ ভাই ছাওয়াল প্রতিপক্ষ রফিককে টেটা বিদ্ধ করে। এতে রফিক মারাত্মক আহত হয়। প্রতিপক্ষ আঃ রউফ ঘাতক লিটনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে জেলে আটক রাখার ভয় দেখায়। ঘাতক লিটন তাদেরকে বলে যে, ‘তোদের এমন মামলা দেব- যাতে তোরা জেল হতে জীবনে বের হতে না পারিস’। এই কথা বলে ঘাতক লিটন তার স্ত্রী মিলন বেগম সহ রাত ১১টার দিকে পরিকল্পনা করে যে, তাদের ছোট মেয়ে ইফাকে হত্যা করলে তাদের প্রতিপক্ষ আঃ রউফ, সোহেল, রফিকদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা যাবে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করলে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবে এবং পুলিশ তাদেরকে আটক করলে জেল থেকে বের হতে পারবে না।

বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সামাজিক ও মানসিক চাপে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে মামলার ভয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য  ঘাতক লিটন তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাদের কনিষ্ঠ শিশু সন্তান ইফা আক্তারকে হত্যা করে এবং মেজ মেয়ে রিফা আক্তারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটায়। তার বড় মেয়ে লিজা নানার বাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। মেয়েকে হত্যার পর স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস জন্মানোর জন্য শোর চিৎকার শুরু করে এবং বলে যে, তার মেয়েকে প্রতিপক্ষ আঃ রউফ, সোহেল, রফিক হত্যা করেছে।

প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে এসে আঃ রউফ, সোহেল, রফিক কর্তৃক হত্যার কোন সত্যতা না পেয়ে ঘাতক লিটনকে জিজ্ঞাসা করে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে সে সঠিক উত্তর দিতে পারে না। চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যার ঘটনার সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে র‌্যাবের একটি বিশেষ টহল দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

গোপন সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে সাত মাসের শিশু ইফাকে তার বাবা ও মা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর  জন্য গভীর রাতে হত্যা করে এবং অপর মেয়ে রিফাকে গুরুতর আহত করে ঐ রাতেই পাষন্ড পিতা লিটন আত্মগোপন করে। ঘাতক লিটনকে গ্রেফতার করতে র‌্যাবের একটি বিশেষ আভিযানিক দল দীর্ঘ সময় অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু ঘাতক লিটন কৌশলে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। অভিযানের এক পর্যায়ে সোমবার দিবাগত ভোর রাতে জানতে পারে-আসামী জকিগঞ্জ অবস্থান করছে। র‌্যাব-৯ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানাধীন বীরশ্রী গ্রামের জাকিরধারী মোড় ব্রীজস্থ  ছামেয়া এন্ড গফ্ফার স্টোরের সামনে থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় এ চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামী মোঃ আব্দুল শহীদ লিটনকে (৩০) গ্রেফতার করে। সে চুনারুঘাট উপজেলার জারুলিয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com