সিলেট ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : সিলেট বিভাগের ৩৬টি উপজেলার মধ্যে ২০টিই রয়েছে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে। ভারতের সীমান্তবর্তী, পাহাড়-টিলা ও বনজঙ্গল ঘেরা হওয়ায় এসব উপজেলার ম্যালেরিয়া বিস্তারের ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বর্তমান সময়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে পুরো দেশের মধ্যে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারই একমাত্র জেলা যার সবগুলো উপজেলাই রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিভাগের সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর, সুনামগঞ্জ জেলার সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্বরপুর, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট, এবং মৌলভীবাজার জেলার সদর, বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ি, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে।
জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের ১৩টি জেলাকে ম্যালেরিয়া প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরমধ্যে সিলেট বিভাগেরই চারটি জেলা রয়েছে। তবে প্রাদুর্ভাবের মাত্রা অনুযায়ী এই জেলাগুলোকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- উচ্চ ম্যালেরিয়া প্রবণ, মধ্য ম্যালেরিয়া প্রবণ ও কম ম্যালেরিয়া প্রবন। সিলেট বিভাগের চারটি জেলা রয়েছে কম ম্যালেরিয়া প্রবন ক্যাটাগরিতে।
সিলেট বিভাগে ম্যালেরিয়া প্রবণ উপজেলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ভারত সীমান্তঘেষা। সীমান্তের ওপারেই রয়েছে উচু পাহাড় ও ঘনজঙ্গল। এছাড়া বাকী উপজেলাগুলো পাহাড়-টিলা ও বন ঘেরা। পাহাড়-টিলা ও বনের আধিক্যের কারণে এসব উপজেলায় মশার বিস্তার বেশি হওয়ার কারণে ম্যালেরিয়া ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া সীমান্তের ওপারে মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম চালানো সম্ভব না হওয়ায় ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা এলাকাগুলোতেও রয়েছে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে, প্রতিবছরই এই অঞ্চলে কমছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। ২০১৩ সালে সিলেট বিভাগে মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১০৮০ জন। ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৫৯ জনে। ২০১৫ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭৫ জন। আর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৩ জন।
ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিলেটে কাজ করছে অনন্ত ২১ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। ২০০৭ সাল থেকে এসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়াম সিলেট ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রন কর্মসূচীর সিলেট বিভাগে নজরদারির দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক বলেন, ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্টের কারণে সিলেটে ম্যালেরিয়া প্রবণতা বেশি। সিলেট পাহাড়, হাওর ও সীমান্তবেষ্টিত এলাকা। সিলেটে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়। এসব কারণে মশার বিস্তার বেশি ঘটে। এছাড়া বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যতোটা গুরুত্ব দেওয়া হয় ভারতের পাহাড়ি এলাকায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে ভারতের সীমান্ত ঘেষা অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ বেশি।
তিনি বলেন, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকার ও বেসরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাগুলোতে বছরে দুই বার মশারি বিতরণ করা হয়। বিনামূল্যে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা এবং চিকিৎসারও ব্যবস্থার রয়েছে। এছাড়া জনসাধারণের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি ও মশার বিস্তার রোধেও বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক গৌরমনি সিনহা বলেন, সিলেট ম্যালেরিয়া ঝুঁকি নেই। বরং ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে এসেছে। তবে ভৌগলিক ও পরিবেশগতকারণে এই অঞ্চলটি ম্যালেরিয়াপ্রবণ।
তবে সরকার এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। সকারী উদ্যোগ ও তৎপরতার সুফলও মিলছে।
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি