যুক্তরাজ্যে ‘আশ্রয়প্রার্থী’ বাংলাদেশির জন্য বড় দুঃসংবাদ

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৪

যুক্তরাজ্যে ‘আশ্রয়প্রার্থী’ বাংলাদেশির জন্য বড় দুঃসংবাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তাই যেসব বাংলাদেশি নাগরিক আশ্রয়প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের ‘দ্রুত প্রত্যাবাসন’ (ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন) ব্যবস্থায় দেশে ফেরত পাঠাবে সেদেশের সরকার। খবর- দ্য টেলিগ্রাফ।

 

শুধু স্থায়ীভাবে থাকার প্রয়াসে গত বছর প্রায় ১১,০০০ বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন, যাদের উদ্দেশ্য ছিল ১২ মাসের মধ্যে আশ্রয়ের আবেদন জমা দেওয়া।

 

অভিবাসীরা গত বছরের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ছাত্র, কর্মী বা দর্শনার্থী ভিসায় এসে আশ্রয় দাবি করে ব্রিটেনের ‘পেছনের দরজা’ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। এসব প্রাথমিক আশ্রয়প্রার্থীর মাত্র ৫ শতাংশই সফল হয়েছেন।

 

যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসনমন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ‘দ্রুত প্রত্যাবাসন’ (ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন) চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, যাতে কেবল ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীই নয়, বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে যারা অপরাধী এবং যারা ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও সেখানে অবস্থান করছেন তাদেরকে সহজে দ্রুত দেশে পাঠানো যায়।

 

এই প্রত্যাবাসন চুক্তি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরো সুগম করবে। যেখানে অপসারণের যথাযথ প্রমাণ তাদের কাছে থাকবে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পূর্বে যে একটি বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার নেয়া হতো সেটির আর প্রয়োজন হবে না।

 

চলতি সপ্তাহে লন্ডনে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক প্রথম ইউকে-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপে এই প্রত্যাবাসন চুক্তিটির ব্যাপারে উভয় দেশ সম্মত হয়। উভয় দেশ তাদের অংশীদারিত্ব জোরদার করতে এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

টমলিনসন বলেন, অবৈধভাবে এখানে আসা বা থাকা বন্ধ করার জন্য অভিবাসীদের অপসারণের কাজ ত্বরান্বিত করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ আমাদের একটি মূল্যবান অংশীদার এবং এটা চমৎকার যে আমরা তাদের সঙ্গে এই অভিবাসন এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করছি।

 

তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে প্রমাণ পেয়েছি যে, এই চুক্তিগুলো অবৈধ অভিবাসনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন এবং আমি সবার জন্য একটি ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।

 

সাধারণত অনুমোদিত ভিসা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেয়– সেটা খুব বেশি হলে মাত্র কয়েক মাস। কিন্তু আশ্রয়ের আবেদন করার মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য এখানে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কারণ তখন অভিবাসীদের অপসারণ করতে গেলে হোম অফিস মানবাধিকার আইনসহ আরো অনেক বাধার সম্মুখীন হয়।

 

গত মাসে ফাঁস হওয়া একটি নথি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত রের্কড সংখ্যক ২১,৫২৫ জন ভিসাধারী আশ্রয়প্রার্থনা করেছেন, যার বার্ষিক বৃদ্ধি ১৫৪% এর মত।

 

এর মানে প্রতি ১৪০ জনের মধ্যে একজন যারা ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেছে তারা আশ্রয় দাবি করেছে। গত এক দশকে ১ লাখ ২ হাজারেরও বেশি লোক শুধু অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পাওয়ার পরে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য আবেদন করেছেন।

 

দাবিদারদের মধ্যে পাকিস্তান ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের প্রায় ১৭ হাজার ৪০০টি মামলা রয়েছে। এরপরে বাংলাদেশ ১১ হাজার, ভারত ৭ হাজার ৪০০, নাইজেরিয়া ৬ হাজার ৬০০ এবং আফগানিস্তান ৬ হাজার।

 

ভিসাধারীদের দায়ের করা বিপুল সংখ্যক আশ্রয় আবেদন (ভিসা-আসাইলাম স্যুইচিং টেবিল) নামে একটি হোম অফিস ডাটাবেসে লগ অন করা হয়।

 

যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপটি বিদ্যমান ভিসা রুটের মাধ্যমে বৈধ অভিবাসন সহজ করার জন্য, ভিসার অপব্যবহারের বিষয়ে সহযোগিতা করার পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলা এবং তথ্য আদান প্রদান জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 

গত বছর, যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই এমন ২৬ হাজার লোককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।

 

আলবেনিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি দ্রুত-প্রত্যাবাসন চুক্তি সে দেশ থেকে ছোট নৌকায় করে অভিবাসীদের আগমনের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমাতে সাহায্য করেছে।

 

(সুরমামেইল/এমকেএইচ)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com