যেসব সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫

যেসব সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন

সুরমামেইল ডেস্ক :
অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেফতার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।

 

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ হস্তান্তর করেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।

ছবি সংগৃহীত।


জানা গেছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন থেকে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশন্স যথাযথ অনুসরণ করে এবং সময়ের ব্যবধানে আধুনিক বিশ্বে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করা হয়—তা বিবেচনায় নিয়ে পাঁচ ধাপে বল প্রয়োগের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ধাপগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক বল প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যাবে।

 

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধিসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংশোধন, আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় কাচের ঘেরাটোপ দেওয়া ‘জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ’ তৈরি, নারী আসামিকে শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে না চাইলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি প্রয়োজনের জন্য জরুরি কল সার্ভিস চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা দেওয়ার অপচর্চা বন্ধ করা, বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে কাউকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন না করার সুপারিশ করা হয়।

 

কমিশন সূত্র জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য সরাসরি সব পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ও জনবান্ধব পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে র‌্যাবের অতীত কার্যক্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে। পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্যে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে, নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে—তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুলিশ কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা, আইনে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি বিচার-বিশ্লেষণ ও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।

 

কমিশন সূত্র জানায়, ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য একটি বিশেষায়িত দল গঠন করা, যাদের তদন্ত সংক্রান্ত ইউনিট ও থানা ব্যতীত অন্যত্র বদলি করা যাবে না। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী চাকরিপ্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রহিত করা, রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাই বন্ধ করার সুপারিশও করা হয়েছে। পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে। যারা ওয়াচডগ বা ওভারসাইট বডি হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা, পদায়ন, বদলি এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে নদীপথের অপরাধ কমাতে ভাসমান থানা গঠন করা, নারী ও জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, লিগ্যাল অফিসার্স সেল ও লিগ্যাল এক্সপার্ট নিয়োগ, কর্মঘণ্টার ক্ষেত্রে আট ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত প্রণোদনা, মানসিক চাপ হ্রাসের জন্য পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও মেলামেশার সুযোগ, বিনোদন কার্যক্রম গ্রহণ, আবাসন সমস্যা নিশ্চিত করা, নির্দিষ্ট মেয়াদে ছুটি ভোগ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সহকারী পুলিশ সুপার নিয়োগের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে উচ্চতা, ওজন, ফিজিক্যাল এনডিউরেন্স টেস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে বাংলাদেশ পুলিশের এজেন্ডা থাকলে আইজিপিকে বোর্ডে উপস্থিত থাকার সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্য ফিট লিস্ট তৈরি, কনস্টেবল থেকে এএসআই এবং এএসআই থেকে এসআই পদোন্নতিতে প্রতি বছর পরীক্ষা দেওয়া ও উত্তীর্ণ হওয়ার রীতি বাতিল করে একবার উত্তীর্ণ হলে তাকে শারীরিক যোগ্যতাসাপেক্ষে পরবর্তী তিন বছরের জন্য পদোন্নতির যোগ্য হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে। নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও বলা হয়েছে।

 

জনকেন্দ্রিক ও জনবান্ধব পুলিশিং করার জন্য নিয়মিত টাউন হল সভা, নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন, একদিন পুলিশ হয়ে দেখুন শিরোনামে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ, সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

 

(সুরমামেইল/এফএ)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com