সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০১৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: একদিকে ভারত, অন্যদিকে পাকিস্তান। জন্ম থেকে বৈরী দুপই পরস্পরকে ছাড় দিতে নারাজ; দুপই যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে প্রস্তুত; প্রস্তুত তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমারু বিমান। ভারত গতকাল পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করে ৭টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম বলছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামের ওই অভিযানে পাকিস্তানের দুই সেনাসদস্যসহ ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ‘প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি দিল্লির অভিযানের দাবিকে বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়ে ইসলামাবাদ দাবি করেছে, দুপরে সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। এতে ভারতের ৮ সেনা নিহত হয়েছে। ভারতীয় এক সেনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে দেশটি। তার নাম ধামও উল্লেখ করা হয়েছে ডন পত্রিকার খবরে। রয়টার্সও একই তথ্য জানিয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।
অবশ্য পাকিস্তানের জিও নিউজের একটি অনুষ্ঠানে দেশটির সাংবাদিক হামিদ মীর বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় দুটি সেক্টরে ১৪ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইজাজ আওয়ানও নিশ্চিত করেছেন ১৪ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার বিষয়টি।
তদুপরি দুদেশের মধ্যকার নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে গত বুধবার দিবাগত রাতে ভারতীয় বাহিনী-কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরিপ্রেেিত পাকিস্তানের প্রতিরামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ পরমাণু হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জিওটিভিতে দেওয়া এক সাাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের পরমাণু অস্ত্রের সম্ভার রয়েছে, সেগুলো সাজিয়ে রাখার জন্য বানানো হয়নি। কেউ যদি পাকিস্তানের ওপর হামলা চালায়, প্রয়োজনে তাদের ওপর ওই বোমা প্রয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না।
আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে রাতে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে ‘আজ রাতে পাল্টা হানার শঙ্কা, তৈরি ভারত’ শিরোনামে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান আজ (বৃহস্পতিবার) গভীর রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় অধিকৃত কাশ্মীর থেকে শুরু করতে পারে লাগাতার গোলাবর্ষণ। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপরের আকাশ চিড়ে দিতে পারে হানাদার পাক বোমারু বিমান। ওপারে ইতোমধ্যে সেই তোড়জোড়, প্রস্তুতির খবর পেয়ে সব আটঘাট বেঁধেই তৈরি হয়ে আছে ভারত। স্থলে শোনা যাচ্ছে ভারতীয় সেনা জওয়ানের বুটের গটগট আওয়াজ। তৈরি বফর্স কামান। অন্তরীে চক্কর মারছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানের আকাশে আজ দুপুর থেকেই চক্কর মারতে দেখা গিয়েছে হানাদার বোমারু বিমানগুলিকে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় উরি, কুপওয়ারা আর পুঞ্চ সেক্টরগুলি এখন থরথর করে কাঁপছে উত্তেজনায়।’
সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেল বলে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের আচরণের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান তেমন আভাসই দেয়। আর তেমনটি হলে সে যুদ্ধ শুধু কাশ্মীরই নয়, এ উপমহাদেশকেও পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে। এমনকি তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেওয়াও অযৌক্তিক নয়।
পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, শুধু উরি, কুপওয়ার আর পুঞ্চই নয়, উত্তেজনায় কাঁপছে রাজৌরি সেক্টরও। ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে নৌশেরায়, আর এস পুরায়। ওই সেক্টরগুলোতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা গ্রামবাসীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এলাকা ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে কয়েকটি গ্রামে। অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে পাঞ্জাব সীমান্তের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদেরও। ওইসব এলাকার স্কুলগুলোকেও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। স্কুলগুলোতে গতকাল থেকেই ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবের ৬ জেলা পাকিস্তানের সীমান্ত-লাগোয়া। ওই জেলাগুলোয় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল রাজ্য প্রশাসনকে যে কোনো রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকস’ সম্পর্কে ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবির সিং গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সন্ত্রাসীরা জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্য শহরে হামলা চালানোর জন্য অবস্থান নিয়েছিল। নিয়ন্ত্রণরেখা দুই কিলোমিটার অতিক্রম করে আটটি অবস্থানে প্যারা-কমান্ডো বাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান চালান। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, রাত সাড়ে ১২টা থেকে অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী এটি চলতে থাকে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডনের খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটা থেকে গুলিবিনিময় শুরু হয়, যা চলতে থাকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এদিকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) অতিক্রম করে ভারতের অভিযানের সময় পাক সেনাদের হাতে এক ভারতীয় সেনা ধরা পড়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স। অভিযানে থাকা ভারতীয়সেনাদের মধ্যে আটজন নিহত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদনে।
ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের এক সেনা অস্ত্রসহ ‘অসাবধানতাবশত’ নিয়ন্ত্রণরেখার পাকিস্তান অংশে প্রবেশ করেছেন বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। উভয় দেশের বেসামরিক নাগরিকরাও ভুলে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ফেলেন। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং যারা পথ ভুল করেছে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’
পাকিস্তানের চাম্ব সেক্টরের দুই সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে অস্ত্রসহ ভারতীয় ওই সেনা ধরা পড়ে।
ডনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের তাত্তাপানি এলাকার নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে ভারতীয় সেনাদের গুলিবর্ষণের সময় পাকিস্তানি সেনারা এক ভারতীয় সেনাকে আটক করে এবং গোলাগুলিতে আট ভারতীয় সেনা নিহত হন। এ ঘটনায় দুই পাক সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। ডনের প্রতিবেদনে আটক ভারতীয় সেনার নাম চান্দু বাবুলাল চৌহান বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই সেনার পিতার নাম বাশান চৌহান। ২২ বছর বয়সী ওই সেনা মহারাষ্ট্র রাজ্যের। আটক ভারতীয় সেনাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি। নিহত ভারতীয় সেনাদের দেহ লড়াইয়ের ময়দানে পড়ে আছে বলে গতকাল দাবি করে ডন। সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডনের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনাদের গুলির ভয়ে ভারতীয় সেনারা এখনো মৃতদেহগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়নি। হামলার ভিডিও ফাঁস
সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ভিডিও ফাঁস করেছে ‘লাইভ লিক’ নামের একটি ওয়েবসাইট। ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে তারা অভিযান পরিচালনা করেছে; কিন্তু পাকিস্তান এ দাবি অস্বীকার করে বলেছে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের সীমান্তরীদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। তবে ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি