সিলেট ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : প্রতি বছর ২৪ মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব যক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বছরের মাত্র এই একটা দিন বিশ্বের নানান প্রান্তে এই রোগ বিষয়ক নানান কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। কিন্তু সেই সভা-সেমিনারও মাত্র একটা দিনই। অথচ আজও এই সামান্য আলোচনার যোগ্য রোগটিতে প্রতিদিন চার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্বে আজ যক্ষার চিকিৎসা বের হয়ে যাবার পরেও এত বিশাল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঠেকানো প্রশ্নে কোনো সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেই। রেডিও-টেলিভিশনে যক্ষা বিষয়ে সামান্য বক্তব্য দিয়েই যেন দায় সেরে ফেলা হলো। অতীত ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাচ্যে এই যক্ষা রোগকে বলা হতো রাজরোগ। আর যার একবার রাজরোগ হয়েছে তার আর রক্ষা নেই। ইতিহাসের সেই সময় লক্ষাধিক মানুষ মারা গিয়েছে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়ে। আজও যুগের পর যুগ ধরে অনেক দেশেই যক্ষা ভয়ংকর রুপে টিকে আছে।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পৃথিবীব্যাপি প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন মানুষ বিশেষ করে তরুণরা যক্ষারোগে আক্রান্ত। শতাধিক বছরের পুরনো রোগ, যার প্রতিষেধক এখন মানুষের হাতে হওয়া স্বত্ত্বেও এই বিপুল সংখ্যক যক্ষা রোগি বিদ্যমান। আর সেখানে শতাব্দী প্রাচীন নয় এবং প্রতিষেধকও বের হয়নি, তবু এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ত্রিশ মিলিয়ন। অবিচ্ছিন্নভাবে বলতে গেলে, এই দুইটি রোগ বিস্তারের ক্ষেত্র বা পদ্ধতি অনেকটা কাছাকাছি। অনেকটা একই পদ্ধতিতে এই রোগের জীবানু মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। দুটো রোগের ক্ষেত্রেই প্রাথমিক লক্ষনসমূহ প্রায় এক। আর এই দুই রোগের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক দীর্ঘমেয়াদী। তবু যক্ষা রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় রোগি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও, এইচআইভির ক্ষেত্রে তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রোগটি এতটাই জটিল যে, মনে হতে পারে রোগটি সেরে গেছে এবং রোগি নিজেকে সুস্থও মনে করতে পারে। কিন্তু আদতে তা নয়, যেকোন মুহূর্তে জীবাণু আবারও ফুসফুসে আক্রমন করতে পারে। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাবে, যক্ষা এবং এইচআইভি দুটিই মানুষের প্রজনন ব্যবস্থাকে আক্রান্ত করে। যে সকল সমাজে সামাজিক কাঠামো মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড বাধা হয়ে দাড়ায়, সেখানেই এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই ২০১৬ সালেও প্রশ্ন করতে হয়ে, এই দীর্ঘমেয়াদী যক্ষারোগ থেকে আমাদের পৃথিবী এইচআইভি ইস্যুতে কি শিখলো আসলে?
১৯৮০ সালের বাস্তবতাতেও মানবসমাজ এইডস প্রশ্নে মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঠিক কতজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এই পরিসংখ্যান নিয়েও ব্যাপক বিতন্ডার সৃষ্টি হয় তখন। কারণ তখনও মানুষ মনে করেছিল এইডস সমাজে তখনও প্রাদুর্ভাব হিসেবে প্রবেশ করতে পারেনি। অধিকাংশ দেশই এইডস প্রশ্নে বেশ চটজলদি এগিয়ে আসতে শুরু করে। তবে এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার ফলে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন যে, এইচআইভির প্রাদুর্ভাব শুধু এককভাবে চিকিৎসা করে ঠেকানো সম্ভব নয়। মানুষকে অবশ্যই এইচআইভি প্রতিরোধের পাশপাশি আরও অন্যান্য রোগগুলোকেও প্রতিরোধ করতে হবে।
ঠিক একইভাবে, যক্ষা রোধে ২০১৬-২০২০ সাল মেয়াদী একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তবেই ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বকে যক্ষা মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্য গ্লোবাল প্যান নামের একটি সংস্থা যক্ষা রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কাজ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে, নতুন ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাটিকে পাল্টে ফেলার জন্য তারা কাজ করছেন। যক্ষা উপদ্রুত দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
আমরা সকলেই জানি, যক্ষা এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে ছড়ায় বায়ুর মাধ্যমে। বিশেষ করে শহরের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে এই রোগের বিস্তার বেশি। অল্প স্থানে অধিক সংখ্যক মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করার কারণে খুব সহজেই রোগ একজন থেকে অপরে ছড়িয়ে যেতে পারে। যক্ষা রোগ নির্মুলে অন্তত টানা ছয় মাস নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা করতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে যক্ষা যে টিকা চলছে তা পঞ্চাশ বছরের পুরনো। নতুন করে কোনো টিকা তৈরি করা হয়নি। এমনকি এই টিকাকে নতুন সময়ের সঙ্গে যুগপোযোগি করেও তোলা হয়নি। এবিষয়ে আগামী জুলাই মাসে ডারবানে অনুষ্ঠিতব্য ২তম আন্তর্জাতিক এইডস কনফারেন্সে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি