রমজানের আগে আরো বাড়বে ডাল-ছোলার দাম

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০১৬

রমজানের আগে আরো বাড়বে ডাল-ছোলার দাম

download-(8)

সুরমা মেইল নিউজ : সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত নিত্যপণ্যের মজুদ আছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ হুঁশিয়ারির পরও বাড়ছে পণ্যের দাম। এর মধ্যে রমজানের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য ছোলার দাম বেশ ঊর্ধ্বমুখী।

আমদানি কম ও  আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম বেশি থাকায় রোজার আগে পণ্যটির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর মতে, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ছোলার দাম বাড়বে। আর তাতে মাসুল গুণতে হবে ভোক্তাদের।

দেশে সারাবছর প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা ৭০ হাজার মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় আমদানির মাধ্যমে ছোলার বিশাল চাহিদা মেটানো হয়।

জুলাই ২০১৫ থেকে মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ৯ মাসে আমদানিকারকরা ছোলা আমদানির জন্য ৫৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টনের এলসি খুলেছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টনের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ রমজানের চাহিদার মাত্র অর্ধেক ছোলা আমদানি করা হয়েছে।

বর্তমানে  আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম প্রতি টনে ১৩০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে ৮৮০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতি টন ছোলার দাম জানুয়ারিতে ছিল ৭৫০ ডলার।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবি ছোলার আমদানি করছে। রোজা উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ছোলা কেনা হয়েছে। যা চলতি মাসের ২২ তারিখ দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানান টিসিবি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. হুমায়ন কবির।

হু হু করে বাড়ছে ডাল ও ছোলার দাম। রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এসব ছোলা বিক্রি হতো ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা।

টিসিবির তথ্য মতে, সোমবার বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহ আগে ৭৮ থেকে ৮৪ টাকায় এবং এক মাস আগে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হতো। সংস্থাটির হিসাব মতে, এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ।

ছোলার সঙ্গে মসুর ডালের দামও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। খুচরা বাজারে দেশি মসুর ডাল মানভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়, তুরস্ক থেকে আমদানি করা মোটা দানার ডাল ১০৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকা, নেপালী মসুর ডাল ১৪৫ টাকা তেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সব ধরনের ডালে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু বাড়ছে। তাই খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো মনিটরিং তাদের নজরে আসেনি বলে জানান তারা।

কাপ্তান বাজারে খুচরা ব্যবসায়ী মনিহার ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন বলেন, গত এক বছরে কোনো মনিটরিং টিম আমাদের বাজারে দেখা যায়নি। আর এখানে এসে তাদের কোনো কাজও হবে না। দাম তো বেশি বাড়ায় মজুদদাররা।

ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাফি মাহমুদ বলেন, ছোলা বা অন্যান্য নিত্যপণ্য গুটি কয়েকজন ব্যবসায়ী আমদানি করে। তাদের সংখ্যা কম হলেও প্রভাব বেশি। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে আমদানিতে পাল্লা দিতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হয়। আমরা একাধিকবার ডাল ও ছোলা আমদানি করে লোকসানে পড়েছি।

পুরান ঢাকার লালবাগের রহমতগঞ্জের ডাল পট্টির পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজধানী ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী মঞ্জুরুল হক জানান, সোমবার প্রতিকেজি ছোলা পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭৭-৮০ টাকা এবং ভালো মানের বার্মার ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৮ -৯০ টাকা।

এ ছাড়া যে মসুরি ডাল পাইকারি বাজারে এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়, তা এ সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২২-১৩৭ টাকায়। সোমবার দেশি মসুরি ১৩৭-১৩৮ টাকা, দেশি হাইব্রিড ১০৫-১০৮ টাকা, অস্ট্রেলিয়ার নিম্নমানের মসুরি ৯৫-৯৮ ‍টাকা, খেসারি ৭০-৭১ টাকা, ডাবলি (অ্যাঙ্কর) ৪০-৪২ টাকা, মুগ ডাল দেশি ভাল মানের ৯৫-১০০ টাকা, হাইব্রিড ৬৩-৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com