সিলেট ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
সুরমামেইল ডেস্ক :
জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং জনবান্ধব পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে র্যাবের অতীত কার্যক্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
একই সঙ্গে পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রম হিসেবে ‘ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি’ গঠনের সুপারিশ এসেছে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর দেওয়ারও ‘জোর’ সুপারিশ করেছে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশন।
বুধবার অন্য চার সংস্কার কমিশনের সঙ্গে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। পরে অনলাইনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। ছবি : সংগৃহীত
এতে বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ ১৫টি বিষয়ে ১০৮টি সুপারিশ করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কারের এ কমিশন গঠন করে।
সাধারণের মতামতসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরির কথা বলেছেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ।
এই সুপারিশগুলো অবিলম্বে, মধ্য মেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ মেয়াদী সুপালিশগুলো বাস্তবায়নে আর্থিক ব্যবহার বা কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত আইন পরিবর্তন করতে হতে পারে।”
চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়ে কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেগুলো শিগগিরই বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করেন সফর রাজ প্রধান।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অতিদ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে পাঠানো আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘেরাটোপ দেওয়া জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ রাখতে হবে।
অন্যদিকে তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে বা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালুর সুপারিশ করেছে কমিশন।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মানবাধিকার অংশে বলা হয়েছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর দেওয়ার ‘জোর’ সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার জন্য দোষী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন সামগ্রিক বিষয় ধর্তব্যে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে।
মামলা নিয়ে হয়রানি কমাতেও কিছু সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে থানায় জিডি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে, কোনোভাবেই তা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। মামলার এফআইআর গ্রহণে কোনো ধরনের অনীহা বা দেরি করা যাবে না।
জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) চাকরিপ্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা বাতিলের সুপারিশও করেছে কমিশন।
কমিশন বলেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শ যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কার করা যেতে পারে। তবে চাকরিপ্রার্থী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সংক্রান্ত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তা ভেরিফিকেশন রিপোর্টে প্রতিফলিত করতে হবে।
পুলিশের দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রম হিসেবে ‘ওয়াচডগ বা ওভারসাইট কমিটি’ গঠনের সুপারিশও এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা যায় যারা স্থানীয় পর্যায়ে ‘ওভারসাইট বডি’ হিসেবে কাজ করবে এবং দুর্নীতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
পুলিশের বর্তমান পুরস্কার কাঠামোকে পুনর্মূল্যায়ন করে সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান কাঠামোয় পুলিশের বিভিন্ন কাজে প্রণোদনা ও উৎসাহ দিতে বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। এর সুনির্দিষট কোনো মানদণ্ড নেই এবং প্রক্রিয়াটি প্রভাবমুক্ত নয়, এই সুযোগের অপব্যবহার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য নিয়মকানুন ও বিধিমালা যাচাইবাছাই করা প্রয়োজন।
জুলাই-অগাস্টে সরকার পতনের আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠে। আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে পুলিশের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাও করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্রর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার আনতে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়।
“সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের হয় সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। ওই ২২টি আইনের কোন কোন ক্ষেত্র আমাদের আপত্তি আছে, বলে দিয়েছি; বলে সুপারিশ করেছি আমরা।”
প্রতিবেদনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়েও সুপারিশ করেছে এই কমিশন।
সফর রাজ বলেন, “দুটো ক্ষেত্রেই হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে হয়ত বা জনসাধরণের কষ্ট লাঘব হত। এক্সেসিভ ফোর্স ব্যবহার, নির্বিচারে কোন গ্রেপ্তার করতে পারত না। নির্দেশনা মানতে হত।
“কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এটার একটা রিভিউ পিটিশন দেওয়া আছে, যার ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনুরোধ করেছি, সরকার যেন এটা উইথড্রো করে, তাহলেই ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এটার জন্য যেটা প্রয়োজন আইন মন্ত্রণালয় হয়ত করবেন।”
(সুরমামেইল/এফএ)
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি