লাল শাপলার অপরূপ রূপে সেজেছে জৈন্তাপুরের ইয়াম বিল

প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬

লাল শাপলার অপরূপ রূপে সেজেছে জৈন্তাপুরের ইয়াম বিল

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি :: পূন্যভুমি সিলেট-এর জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওড় এলাকা সংলগ্ন ইয়াম বিল এখন লাল শাপলার বিল নামে পরিচিত। শীতের আগমণের সাথে সাথে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সেজেছে লাল শাপলার ইয়াম বিল। ব্রিটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য জৈন্তাপুর। শ্রীহট্ট তথা ভারত বর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সাম্রাজ্যভূক্ত ছিলো, তখনও জৈন্তিয়া তার পৃথক ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছিল। হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাভারত ও রামায়নে জৈন্তিয়া রাজ্যের কথা উল্লেখ্য রয়েছে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দ রাজা রামসিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ায় খনিজ সম্পদে ভরপুর ছিল। বর্তমানেও রয়েছে।

রাজা রামসিংহ ১৭৭৮ সালে ঢুপী গ্রামে নামেশ্বর শিব মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ হ্যারি নামক ইংরেজ নাবিক রাজা রাজেন্দ্র শিংহকে কৌশলে বন্ধি করে বহু মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নেয়। ডিবির হাওড় রাজা রামসিংহের স্মৃতি বিজড়িত সমাধীস্থল সংলগ্নই লাল শাপলার বিল। এ বিলের পারে রামসিংহকে সমাধি করা হয়েছে। ইয়াম বিল ছাড়াও এখানে রয়েছে লাল শাপলার আরও তিনটি বিল।

এ বিলে লাল শাপলার বিস্তার জানতে চাইলে, স্থানীয় মুরুব্বী আব্দুল মালেক জানান, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে বিলের তীরবর্তী স্থানে লোকজন বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করেন। ইতোপূর্বে বিলগুলোতে শাপলা ছিলোনা। তবে ২০/২৫ বছর পূর্বে সীমান্তের ওপারের খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের দেবতাকে খুশি করার জন্য লাল শাপলার ফুল দিয়ে পূজা অর্চনা করত। শাপলা ফুলের চাহিদা পুরনের জন্য জৈনেক খাসিয়া ইয়াম বিলে একটি শাপলার চারা রোপন করেন। তারপর থেকে ইয়াম বিল এবং এর আশ-পাশের বিলগুলোতে লাল শাপলায় ভরপুর হয়ে উঠে।

বিল গুলোতে সূর্য উঠার সাথে সাথে লাল শাপলার ফুল ফুটে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুলগুলো নিশ্চুপ নীরব হয়ে যায়। লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল ইয়াম বিল এবং এর আশ-পাশের পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘন কোয়াশা ও শীত অপেক্ষা করে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে দল‘বেধে ছুটে আসে অগনিত পর্যটক। এতে করে পর্যটকদের ঢল নামে লাল শাপলার বিলে। সেই সঙ্গে রের্কড পরিমান পর্যটক যোগ হয় জৈন্তাপুরে। ইয়াম বিলের লাল শাপলার ফুটন্ত ফুল যেন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের গভীর মিতালীর হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

পর্যটকদের মতে সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ রাতারগুল, বিছনাকান্দী, মায়াবন, পানতুমাই’র মায়াবী ঝর্ণা, বল্লঘাটের জমিদার বাড়ী, শ্রীপুরের চা-বাগান, দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে ডিবির হাওড়ের লাল শাপলার ইয়ামবিল ও স্থান দখল করে নিয়েছে। লাল শাপলার বিলে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতির কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, লাল শাপলার বিলের পরিবেশ অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর। রাজা রামসিংহের সমাধিস্থল, বিলের চার পাশে খাসিয়া পাহাড়, এবং এখানের লোকজন অনেক সহনীয় এবং নিরাপদ স্থান। এধরনের পরিবেশ সত্যিই পর্যটকদের ভাল লাগার দাবী রাখে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন সরকারী সহযোতিায় লাল শাপলার বিল সংলগ্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা ও পর্যটকদের থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থার জন্য কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট ও হোটেল স্থাপন করলে দেশী বিদেশী পর্যটকদের সমাগম ঘটবে জৈন্তাপুরে এবং এটা দেশের আর্কষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com