সিলেট ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : নিজের মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন সিলেট নগরীর শেখঘাটের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোশতাক আহমদ। এই ব্যস্ততার ফাঁকে বিকাল ৫টার দিকে তার মোবাইলে দুটো কল আসে ‘ইমো’তে। কল দুটো এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী তার ছোটভাই জুবায়ের আহমদ জুবেরের কাছ থেকে। ব্যস্ততার কারণে কলগুলো রিসিভ করতে পারেননি বড় ভাই (মোশতাক আহমদ)। রাতে বাসায় ফিরে ছোটভাইকে কল করে সাড়া পাননি। ঘুণাক্ষরেও টের পাননি অন্য প্রান্তে ঘটে গেছে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা।
জুবায়ের আহমদ জুবেরের মনে সব সময় বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় ছিল। বড় ভাই মোশতাক আহমদকে অনেকবার সে কথা বলেওছিলেন। ছোট ভাইয়ের ভয়ের কথা শুনে তাকে প্রবাসজীবনের ইতি ঘটিয়ে দেশে ফিরে আসতেও পরামর্শ দিয়েছিলেন বড় ভাই। হাতে আর কিছু টাকা জমলে ফিরে আসবেন আশ্বস্ত করেছিলেন জুবের। যিনি সংসারে আরো একটু সুখ আনতে ২০১২ সালের শেষের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। যেদিক থেকে বিপদ আসার ভয় ছিল সেদিক থেকে নয় বিপদ এসেছে সড়ক পথে। ২৭শে এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় জুবেরের। বিমানে উড়ে এসে তার মরদেহ আজ রাত ৮টায় বাংলাদেশের মাটি ছুঁবে। ঢাকা থেকে মরদেহ শেখঘাটে আসার পর আগামীকাল চিরশয্যায় শায়িত হবেন জুবের।
২৭শে এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় দক্ষিণ আফ্রিকার নর্দান কেপ অঙ্গরাজ্যের আপিংটন শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্থানীয় এক বাসিন্দার সঙ্গে নিহত হন দুই বাংলাদেশি। যাদের একজন সিলেটের শেখঘাটের বাসিন্দা জুবায়ের আহমদ জুবের। শেখঘাটেরই বাসিন্দা দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী এহসানুল মাহবুব হাসান এ দুঃসংবাদটি প্রথম বাংলাদেশে জানান।
তিনি সরাসরি জুবেরের পরিবারকে দুর্ঘটনার খবর জানাতে সাহস পাননি। বিষয়টি জানান নিজের বড় ভাই মাওলানা আহমদ হোসেনকে। এলাকায় অনেকের কাছে বললেও আহমদ হোসেনের বুক কাঁপে এ মর্মান্তিক বার্তাটি সরাসরি জুবেরের পরিবারের কারো কানে পেঁৗঁছে দিতে। ফোন দেন জুবেরের মামা নগরীর নাইওরপুলের বাসিন্দা হারুন উর রশীদকে। হারুন উর রশীদ ফোনে জুবেরের বড় ভাই মোশতাক আহমদকে জানান, জুবেরের শরীর খারাপ। মোশতাক আহমদ ভেবে পান না দক্ষিণ আফ্রিকায় তার ভাইয়ের অসুস্থতার খবর তারা জানার আগে মামা জানলেন কি করে। অজানা আশঙ্কা ভর করে মোশতাক আহমদের মনে। তিনি ফোন দেন ছোট ভাই জুবেরের ফোনে। ফোনটি ধরেন, জুবেরের বন্ধু ও শেখঘাটেরই বাসিন্দা রুহুল। মোশতাক আহমদ আর কিছুই জানতে চান না সরাসরি প্রশ্ন করেন, তার ভাই বেঁচে আছে কি না। কিছুক্ষণ নীরবতার পর রুহুল জানান, জুবের আর বেঁচে নেই। মোশতাক আহমদের চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসে।
মা আছেন, বাবা নেই। ৪ বোন আর ৩ ভাই তারা। ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া জুবায়ের আহমদ জুবের ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। তার ছোট কেবল ১ বোন। তাদের সংসারে তেমন অসচ্ছলতা ছিল না। তবুও সংসারে আরো একটু সচ্ছলতা আনতে ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমিয়েছিলেন জুবের।
শেখঘাটের মরহুম জমির উদ্দিনের ছেলে জুবের দেশে থাকতে আইপিএসের কাজ করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ঠিকানা গাঁড়েন নর্দান কেপের অরেঞ্জ নদীর তীরে গড়ে উঠা আপিংটন শহরে। প্রথমে একটি গ্রোসারি শপে কাজ নেন। বছর খানেক আগে বন্ধু সালেহ আহমদের সঙ্গে মিলে নিজেই একটি গ্রোসারি শপ খুলেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল তবে স্থানীয়দের উৎপাতও ছিল। বিষয়টি বড় ভাই মোশতাক আহমদকে জানিয়েছিলেন জুবের। তিনি দেশে ফিরে আসতে বলেছিলেন জুবেরকে। জুবের বলেছিলেন একটু গুছিয়ে নিলে দেশে আসবেন। কেউ ভাবেনি সবকিছু চিরদিনের মতো গুছিয়ে এভাবে নিথর দেহে দেশে ফিরবেন জুবের।
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি