শান্তিগঞ্জে দু’গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ৩০

প্রকাশিত: ১১:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২৫

শান্তিগঞ্জে দু’গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ৩০

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন লোক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

 

সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর ২টায় উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে পিঠাপশী ও ঘোড়াডুম্বুর গ্রামবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় কৈতক হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

পিঠাপশী গ্রামের পক্ষের আহতরা হলেন- মৃত আরজক আলীর ছেলে আয়েছ মিয়া, নোয়াব আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ছুরুক, আমরাজ মিয়া, কদরিছ আলরি ছেলে জুনেদ আহমদ। ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের পক্ষের আহতরা হলেন ফজর আলীর ছেলে ফয়সল আহমদ, মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে ছুরত মিয়া, মৃত হিরন মিয়ার ছেলে ফখরুল ইসলাম, রফিক উদ্দিনের ছেলে সাইকুল ইসলাম, নাহার মামুনের ছেলে খোয়াজ আলী, গয়াছ মিয়ার ছেলে মনসুর উদ্দিন। তাৎক্ষনিকভাবে অন্যান্য আহতদে কে বিভিন্ন হাসপাতালো পাঠানোর কারণে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে, লেগুনা চালক ফখরুল ইসলামের ১৫ মাসের এক শিশু সন্তান গুরুতর অসুস্থ্য হন। তাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারে নিতে নিজ লেগুনা যোগে রাতেই বের হন ফখরুল। সাথে ছিলেন চালক ফখরুলের মা, স্ত্রী ও এক ভাই। দ্রুত লেগুনা চালিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন ফখরুল। শিশুর অবস্থা সংটাপন্ন হওয়ায় গাড়িতে কান্নাকাটি করছিলেন শিশুর মা ও দাদী। রাস্তা দিয়ে যখন গাড়ি চলছিলো তখন ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের লোকজন গাড়ির ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসায় তারা ভেবে নেন কোনো চক্রের লোকজন কোনো এক মহিলাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

ওই সময় তারা সামনের গ্রাম পিঠাপশীর লোকজনকে মুটোফোনের মাধ্যমে জানান- গাড়িটি আটকিয়ে ঘটনা কি তা বুঝার চেষ্টা করতে। এই খবর পেয়ে পিঠাপশী গ্রামের এমরাজ মিয়া, ছালিক মিয়া ও শামীম মিয়াসহ কয়েজন ফখরুলের গাড়িকে থামার জন্য সিগন্যাল দেন। কিন্তু ফখরুল গাড়ি না থামানোয় এবং গাড়ির ভিতর থেকে মহিলার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়ায় তাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়।

 

পরে মোটরসাইকে দিয়ে তাড়া করে এবং সামনের গ্রাম খারাইয়ের মানুষের সহায়তায় খারাই পয়েন্টে লেগুনাকে আটকানো হয়। এসময় গাড়ি থেকে নেমে উপস্থিত লোকদেরকে বিষয়টি না বুঝিয়ে রাগারাগি করেন চালক ফখরুল। পরে চালককে আটকে রাখে উপস্থিত লোকজন। পরে বিষয়টি বুঝতে পারলে শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য পাঠান খারাই ও পিঠাপশী গ্রামবাসী। এই ঘটনার জেরে সোমবার দুপুরে পিঠাপশী গ্রামের হেলাল আহমদ (২০) ঘোড়াডুম্বার গ্রামে গেলে তাকে আটকে রাখে ওই গ্রামের লোকজন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পিঠাপশী গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। দুপুর ২টায় সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ।

 

ঘোড়াডুম্বুর গ্রামের মুরব্বি নূর মিয়া জানান, পিঠাপশী গ্রামের সামনের রাস্তা আমরা ব্যবহার করি বলে আমাদের সাথে এই গ্রামের মানুষ সব সময়ই খারাপ আচরণ করে। ফখরুল তার অসুস্থ শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় কেনো দ্রুত গতিতে গাড়ি চালালো এবং সিগন্যাল মানলো না এজন্য মোটরসাইকেল দিয়ে দৌঁড়িয়ে ধরে তাকে মারধর করেছে। খারাই গ্রামের মানুষজন আটকানোর চেষ্টা করেছে, তাদেরও সাথে মারামারি করেছে।

 

পিঠাপশী গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য আবদাল হোসেন ও শালিস ব্যক্তিত্ব মজিদুর রহমার মধু বলেন, শনিবার রাতে ঘোড়াডুম্বুর গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামের ছেলেদের মোবাইল ফোনে কল আসে, একটি গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে যাচ্ছে। গাড়িতে মহিলাদের কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আমাদের ছেলেরা গাড়িতে সিগন্যাল দিয়ে সে সিগন্যাল না মেনে গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

 

ব্যাপারটি সন্দেহ হলে তারা মোটরসাইকেলে এসে খারাই পয়েন্টে গাড়ি আটকায়। তখন খারাই গ্রামের মানুষও ছিলো। গাড়ি চালক ফখরুল তার মেয়ে অসুস্থ্যের বিষয়টি কাউকে না বুঝিয়ে সবার সাথে বাজে আচরণ করে এবং হুমকি-ধামকি দেয়। পরে বিষয়টি বুঝার পর আমরা নিজেরা মিলে শিশুটিকে হাসপাতালে পাঠাই।

 

এই ঘটনার জেরে সোমবার তারা আমাদের গ্রামের হেলাল আহমদ নামের একজনকে বেঁধে আটকে রাখে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমাদের অনেকে আহত।

 

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের ফোর্স ঘটনাস্থলে আছে। পরিস্থিতি শান্ত। মামলা হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

(সুরমামেইল/এসডি)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com