শাবিতে ৫ বছরে ভর্তি ফরমের দাম দ্বিগুণ : ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ৩:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০১৬

শাবিতে ৫ বছরে ভর্তি ফরমের দাম দ্বিগুণ : ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

download

শাবি প্রতিনিধি :: ২০১১-১২ সেশনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) বি ইউনিটে (স্থাপত্যবিদ্যা সহ) ভর্তি ফরমের দাম ছিলো ৬০০ টাকা, মাত্র পাঁচ বছরেই তা দ্বিগুন হয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে দাঁড়িয়েছে ১২০০ টাকায়। এছাড়া এ ইউনিটের যে ফরমের দাম ২০১১-১২ তে ৫৫০ টাকা ছিলো তা এবার ১০০০ টাকা করা হয়েছে। শুধুমাত্র তিনটি নতুন বিভাগ সংযোজন ছাড়া নতুন খুব বেশী কিছু সংযুক্ত হয়নি এ কয়েকবছরের ব্যবধানে। এর আগে প্রতিবছর ৫০ টাকা করে বাড়ালেও খরচ বাড়ানোর অজুহাতে গতবছরের তুলনায় এবার ভর্তি ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ। প্রতি বছর এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধির কারণে শিক্ষাটা একশ্রেণীর মানুষের কুক্ষিগত হচ্ছে এমনটাই মন্তব্য বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আগামী ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় এ ইউনিট এবং দুপুর আড়াইটায় বি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

ভর্তি আবেদন ফরম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে শাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক অপু কুমার দাশ যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছর ৫০ টাকা করে বাড়ালেও এবার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে যা একাধারে অনৈতিক, অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক। এরকম চলতে থাকলে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়া তো দুরের কথা ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবে না। অচিরেই এ সিদ্ধান্ত পরিহার করে ভর্তি ফরমের মূল্য হ্রাস করার আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সুদীপ্ত বিশ^াস বিভু বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেয় শিক্ষাটা এখন আর সবার অধিকার না। শুধুমাত্র যাদের কাছে অর্থ আছে তারাই এখন ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। মেধাকে অর্থের বিনিময়ে কিনে ফেলার নীতি থেকে প্রশাসনের বেরিয়ে আসা উচিত। শাবি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার জানান, ভর্তি ফি’র এই ক্রমবর্ধমান সংস্কৃতি অবশ্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক এবং প্রাইভেটাইজেশনের সাথে সংগতিপূর্ণ। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন ভুলে না যায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আরেক সাবেক আহ্বায়ক মাহীদুল ইসলাম রাতুল যুগান্তরকে বলেন, সম্ভবত বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ভুলে গেছে একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র একটি বিশ^বিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষা দেয় না। তাই এ ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত অচিরেই প্রশাসন সরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভর্তি কমিটির সভাপতি ড. নিয়াজ আহমেদ বলেন, ভর্তি ও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন খরচের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়গুলো যখন বেশ কয়েকটি ইউনিটে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেখানে মাত্র দুটি ইউনিটে সবগুলো বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতেই এবার ভর্তি ফরমের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে শুধু ভর্তি আবেদন ফি নয়, প্রতিবছর ক্রমাগত ভর্তি ফি, ক্রেডিট ফি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ফি বাড়িয়ে চলছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সে তুলনায় দৃশ্যমান কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ২০১৩-১৪ শিক্ষার্থীরা ৪৮৫০ টাকা দিয়ে ভর্তি হলেও ২০১৫/১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের গুনতে হয়েছে ৬৮৫০ টাকা। আবাসন সংকট, পরিবহন, সেশনজটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রেণীকক্ষ সংকটে রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়টিতে।তাই এই সিদ্ধান্তগুলোকে ‘প্রশাসনের একচেটিয়া আধিপত্য’ কিংবা ‘শিক্ষার্থী বান্ধব নয়’ বলে অবহিত করছেন। কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা না বাড়িয়েই প্রতি ক্ষেত্রে ফি বর্ধনের রীতি থেকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com