সিলেটের আমজাদ আলীর গড়ি মেরামতে এবার কোন প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ৩:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬

সিলেটের আমজাদ আলীর গড়ি মেরামতে এবার কোন প্রযুক্তি

amjad-clock
সুরমা মেইল নিউজ : ২৮ লাখ টাকার ফাইল কোথায় নতুন করে আবার দরপত্র কেন, এমন প্রশ্নের পরও এবার হয়তো সিলেট নগরবাসী শুনতে পারবে ঢং ঢাং শব্দ। সিলেট সিটি করপোরশন (সিসিক) নাকি আমজাদ আলীর ঘড়ি মেরামত করতে আবার দরপত্র আহ্বানর করছে। এবার কত টাকা যাবে গচ্ছা কে যানে। ইতিপূর্বে গড়ি মেরামত নিয়ে যে ´্পােনী কন্ট্রাক করেছিল সে কি করে দায় থেকে বেচে গেলো এমন প্রশ্ন নগরবাসীর তবে আশার কথা হলো সিসিক’র এই সিদ্ধান্তে সিলেট নগরবাসী আবারো আশায় বুক বাঁধছেন ঐতিহ্যের স্মারক এই ঘড়ির ঘন্টার শব্দ শুনতে।‘আলী আমজাদের ঘড়ি, জিতু মিয়ার বাড়ি, চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি, বঙ্কু বাবুর দাঁড়ি এই চারে সিলেটীদের বেটাগিরি’। সিলেটের ঐতিহ্য বোঝাতে এমন প্রবাদের প্রচলন ছিল অতীতে। ঐতিহ্যের এই চার স্মারকের মধ্যে বঙ্কু বাবু বেঁচে নেই। জিতু মিয়ার বাড়ি ও চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি জানান দিয়ে যাচ্ছে সিলেটের প্রাচীণ ঐতিহ্যকে। আর ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ কাঁটার আলী আমজাদের ঘড়ি। দীর্ঘদিন থেকে অচল থাকা ঘড়িটি আবারো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরশন (সিসিক)। ইতিহাস থেকে জানা যায়- ১৮৭৪ সালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রুক সিলেট সফরে আসেন। তার সম্মানে সিলেট বিভাগের (তৎকালীন সিলেট জেলা) মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার প্রথিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার সুরমা নদীর উত্তর প্রান্তে কিনব্রিজের পাশে ঘড়িঘরটি নির্মাণ করা হয়। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়ি ঘরে স্থাপন করা হয় আড়াই ফুট ডায়ামিটার ও দুই ফুট লম্বা কাঁটার ঘড়ি। এক সময় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সিলেটে আসা লোকজন এই ঘড়ির সময় দেখে তাদের কার্যসম্পাদন করতেন। ঘড়ির ঘন্টার শব্দ অনেক দূর থেকেও শোনা যেত। নবাব আলী আহমদ খান নির্মিত ঘড়িটি তার ছেলে আলী আমজাদের নামেই স্থান করে নেয় ইতিহাসে। সিলেটসহ সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন ঘড়িটি আলী আমজাদের ঘড়ি হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘড়িটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর দীর্ঘদিন ঘড়িঘর পড়ে থাকে অযত্মে-অবহেলায়। আশির দশকে প্রবাসীদের অর্থায়নে ঘড়িটি সংস্কার করা হয়। এরপর ঘড়িটি কয়েক বছর সচল থাকলেও পরে আবারও বিকল হয়ে পড়ে। ওই সময় ঢাকার একটি কোম্পানি ঘড়িটি মেরামত করলেও বেশিদিন ঠেকেনি। এরপর জাপানি কোম্পানি সিজান ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি আবার চালু করে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবারও বন্ধ হয়ে যায় ঘড়ির কাঁটা। ২০১০ সালে ঘড়িটি সচল করে সিটি করপোরেশন। ছয় মাস যেতে না যেতেই এটি বিকল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১১ সালে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটি ফের মেরামত করা হয়। কিন্তু ৬ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় ঘড়ির কাঁটা ঘোরা। এ অবস্থায় সিসিক আবারো ঘড়িটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি করপোরেশনের সাধারণ সভায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘড়িটি সচল করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিসিক’র এই সিদ্ধান্তের পর থেকে নগরবাসী আবারো আলী আমজাদের ঘড়ির ঢং ঢং ঘন্টার শব্দ শোনার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ঘড়িটি অনেক পুরাতন। নতুন প্রযুক্তিতেও ঘড়িটি মেরামত করে বেশিদিন সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘড়িটি সচল রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com