সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়াসহ তিন দফা ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৫

সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়াসহ তিন দফা ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের

সিলেট :
বন্ধ পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়াসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

 

বুধবার (১৮ জুন) ‘সিলেট জেলা পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

 

এদিন দুপুরে  নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মলেনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মুখপাত্র শাব্বির আহমেদ ফয়েজ।

 

লিখিত বক্তব্যে তিনি তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ১. সরকারিভাবে অনুমোদিত কোয়ারিগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া। ২. পাথরবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা। ৩. কোয়ারিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন।

 

২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণার গেজেট প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এই আবেদন করেছিল ২০১২ সালে। এরপর থেকে কয়েকটি ধাপে জাফলং, ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের ৫টি কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।

 

২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি জাফলংকে ‘ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২ দশমিক ৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়।

 

তবে গত বছর ৫ আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সবগুলো পাথর কোয়ারি থেকেই ব্যাপক লুটপাট শুরু হয়। এর মধ্যেই পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।


।আরও পড়ুন


গত শনিবার (১৪ জুন) জাফলং এলাকা পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টারা পাথর উত্তোলন ও পরিবেশ বিনষ্টকারী কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

 

পরিদর্শন শেষে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে, এইরকম জায়গায় আমরা আর পাথর উত্তোলনে অনুমতি দিব না। এই জায়গা (জাফলং) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, আমরা কথা বলেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে, এইখানে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য।

 

আর জাফলং এলাকায় অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

 

জাফলং পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এই এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। আপাতত এখান থেকে আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানে যেসব ক্রাশার মেশিন রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

 

তিনি, সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো যদি সঠিকভাবে উন্নয়ন করা যায়, তাহলে এখান থেকে এমন রাজস্ব আসবে, যা লন্ডন থেকে আসা রেমিট্যান্সকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে-আমরা কি পাথর তুলে পরিবেশ ধ্বংস করব, নাকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করব।

 

এমন বক্তব্যের পরই স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন দুই উপদেষ্টা। তাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন পাথর শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা। এদিকে, উপদেষ্টার নির্দেশনার পর মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান।

 

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট  ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

 

এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সিলেট অঞ্চলের পাথর শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।

 

বক্তারা বলেন, একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে, তেমনি তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমিক, ট্রাকচালক, হেলপার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার পরিবার।

 

তাদের দাবি, ভারতের মেঘালয় থেকে কয়লা ও পাথর আমদানির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পিয়াইন, ধলাই, গোয়াইন ও সারি নদীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে নদীগুলোতে ব্যাপক হারে পলি জমে প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং অপরদিকে মূল্যবান ভূমি পরিণত হচ্ছে বালুময় চরে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় অবৈধ চুরি, চাঁদাবাজি ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাথর প্রবেশ করছে। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।

 

তারা আরও জানান, আগামী ২২ জুনের মধ্যে দাবি মানা না হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

 

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, পরিবেশ রক্ষা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় স্থানীয় কোয়ারিগুলো পুনরায় চালু করে শ্রমজীবী মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনা হোক।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আজিজুল জলিল আহমদ ও সদস্য সচিব নজির আহমদ স্বপন।

 

(সুরমামেইল/এমকে)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com