সিলেট ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০১৬
সুরমা মেইল ডটকম : আবহমান বাংলার লোকশিল্পের এক ঐতিহ্যর নাম শীতলপাটি। অনেক লোক গানে, কবিতায় নানাভাবে উচ্চারিত করতো শীতলপাটির কথা। গ্রামবাংলায় কারো বাড়ীতে নতুন অতিথি এলে শীতল পাটি বিছিয়ে দেওয়ার ঐতিহ্য বহুকালের। সেই ঐতিহ্যর কথা এখন শোনা যায় লোক ছড়ার কাহিনীতে। শীতল পাটির ছোয়ায় প্রাণ জোরাতো আগেকার মানুষের। আর সিলেটের এই শীতল পাটির কদর ছিল বিশ্বজুড়ে। ব্রিটিশ আমলে ভিক্টোরিয়ার রাজপ্রাসাদে স্থান লাভ করেছিল সিলেটের শীতল পাটি।
হাজার হাজার মানুষের জীবিকার অবলম্বন হয়ে উঠেছিল শীতল পাটি। কালের বিবর্তনে এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু ঐতিহ্যের ধারায় আজও শীতল পাটির অবস্থান শীর্ষে। শীতল পাটি বুননের সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও সিলেট অঞ্চলের শিল্প সচেতন মানুষের আবিস্কার এই শীতল পাটি এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া চাঁনপুরন, শ্রীনাথপুর, আতাসন, গৌরীপুর, লোহামোড়া, খুজগীপুর, কোয়ারগাঁও, হরিশ্যাম, টেকামুদ্রা, কলমপুর, আলগাপুরসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক এক সময় শীতল পাটি শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। সিলেট অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় শীতল পাটি তৈরি হলেও বালাগঞ্জের শীতল পাটিই অনন্য।
এক সময় এই উপজেলায় তৈরি শীতল পাটি শুধু বাংলাদেশেই বাজারজাত হতো না তা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেও রপ্তানি হতো। ইংলান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় শীতল পাটির কদর ছিল ঈর্ষণীয়। ভারতবর্ষে আগমনের প্রমাণ হিসেবে ভিনদেশীরা ঢাকার মসলিনের পাশাপাশি বালাগঞ্জের শীতল পাটি নিযে যেতেন স্মৃতি হিসেবে। সিলেটে এই শিল্প গড়ে উঠার মূল কারণ শীতল পাটি তৈরির প্রধান উপকরণ মূর্তা গাছ।
সিলেট অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া মূর্তা গাছের জন্য সহায়ক। এই গাছ থেকে আহরিত বেত দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে শীতল পাটি। বিশেষ ধরনের এই গাছ বনাঞ্চলের স্যাঁতস্যাঁতে মাটি ও বাড়ির পার্শ্ববর্তী ভেজা নিচু জমিতে হয়ে থাকে। ডুবা অথবা পুকুরের একপাশেও মূর্তা গাছ হয়। বেতের প্রস্থের মাপে শীতল পাটি নামকরণ করা হয়ে থাকে সিকি, আধুলি, টাকা সোনামুড়ি, নয়নতারা, আসমানতারা প্রভৃতি।
একেকটি শীতল পাটি তৈরি করতে একজন দক্ষ শিল্পীর ৩-৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। যার ফলে বর্তমানে শীতল পাটির দাম অত্যধিক। এক একটি শীতল পাটি ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
বর্তমানে বালাগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মূর্তা বাগান থাকলেও তা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে অনেক শিল্পীই নিজেদের আদি পেশা ছেড়ে অন্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। আর বাপ দাদার উত্তারাধিকার হিসেবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে শীতল পাটি শিল্পীদের জীবন একেবারেই নাজুক । জীবন এবং জীবিকার তাগিদে অনেকে বদল করেছেন এ পেশা । শীতল পাটি এক সময় এ অঞ্চলে সভ্যতার মাপকাঠি ছিল। শীতল পাটি শিল্পীদের বর্তমান অবস্থা জানতে কথা হয় মুকুল দাসের সাথে।
তিনি বলেন একটা শীতল পাটি তৈরি করতে ১০থেকে১৫দিন লাগে। কিন্তু বাজারে সাধারণ শীতল পাটি বিক্রি করলে ৩০০-৪০০টাকার বেশি মুল্যে পাওয়া যায় না আর সু বেতের তৈরী শীতল পাটি প্রায় ১০ থেকে ১৫হাজার টাকা বিক্রি হয়। ফলে শ্রমমুল্যে না পাওয়ায় অনেকেই এখন আর শীতল পাটি তৈরি করতে আগ্রহী নন। যার জন্য দিন দিন লোকের ঘর থেকে সরে গিয়ে শুভা পাচ্ছে ইতিহাসের পাতায়। এমন দিন ছিল বিভিন্ন খাল বিল ও লোকালয়ের পাশে শীতল পাটির প্রধান উপকরণ মুর্তা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে তা দুষপ্রাপ্য হয়ে উঠেছে। লোকজন নিজেদের প্রয়োজনে মুর্তা উজার করে ফেলছে।
দরিদ্র অনেক পরিবার তাদের বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করে থাকেন। আশি সালের দিকে একবার সরকার মুর্তা উৎপাদনের জন্য ঋণ দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে আর কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। ফলে মুর্তা এখন নেই বললেই চলে। দূর থেকে মুর্তা ক্রয় করে আনতে যে খরচ হয় সব কিছু বাদ দিয়ে নিট মুনাফা আসে এর চেয়েও কম। এতে উৎসাহ হারায় পাটি শিল্পীরা। হস্ত ও কুটিরশিল্পকে উৎসাহিত করতে সরকারের একটি প্রতিষ্টান থাকলেও শীতল পাটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কোনো উদ্যোগ চোখে পরছে না।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি