সিলেট ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : আসন্ন কাউন্সিলকে ঘিরে এখন সরব সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। ৬ ফেব্রুয়ারি এই দুই কমিটিরই দীর্ঘ প্রত্যাশিত কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এতে যোগ দেবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহে কেন্দ্রীয়। আহবায়ক কমিটি গঠনের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এখন সরব সিলেট বিএনপি। পদে ফিরতে ও থাকতে চলছে লবিং। হচ্ছে গ্রুপিং। পদপ্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ বলয়ে লবিং করছে কেন্দ্রে। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে। সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (নিখোঁজ) ইলিয়াস আলী ২০০৯ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে ওই দুটি কমিটি বিলপ্তি ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুটি আহ্বায়ক কমিটি তৃণমূলে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করলেও আন্দোলনের কারণে জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা যায়নি। পাশাপাশি দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী ছিলেন কারাগারে। এখনও সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা কারাগারে রয়েছেন। একাধিক মামলা থাকার কারণে তারা কাউন্সিলের আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।এই অবস্থায়ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ফের সতেজ হয়ে উঠেছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। তবে, এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন অনেক মুখই দুটি কমিটিতে স্থান পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। নতুনরা গত আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন বেশি। এ কারণে অনেকেই এখন কারাগারে। কেউ কেউ হুলিয়া মাথায় নিয়ে চলে গেছেন লন্ডনে। ফলে নতুনদের দিকে নজর দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা। যারা দলকে শক্তিশালী করতে পারবেন তাদের দিকেও রয়েছে বিশেষ নজর। সিলেট জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল হক। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না সেটি প্রায় নিশ্চিত। জেলার সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম ও বিএনপি নেতা আবুল কাহের শামীম। সেলিম এক সময় ইলিয়াস বলয়ের নেতা হলেও বর্তমানে কোনো বলয়ে নেই। আর কাহের শামীম পদত্যাগকারী নেতা সমশের মুবীন বলয়ের শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত। এই পদে তৃণমূলের নেতারা চাইছেন বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদী লুনাকে। কিন্তু লুনা এ পদে আগ্রহী নন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ততটা মাথা ঘামাচ্ছে না। এ কারণে জেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে লুনামুখী হয়েছেন সিলেটের নেতারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। দোয়া ও সমর্থন চেয়ে চলে এসেছেন সিলেটে। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছে দুই তরুণ নেতা অ্যাডভোকেট শাসমুজ্জামান জামান ও আলী আহমদ। এখন সিলেট বিএনপির কাছে এই দুই নেতার জনপ্রিয়তার কমতি নেই। দুজনকেই সুসংহত অবস্থানে দেখতে চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু জেলা সেক্রেটারি পদে এই দুই নেতা এক সঙ্গে প্রার্থী হওয়ায় এখানে প্রার্থী যাচাইয়ে বেগ পেতে হবে কেন্দ্রকেও। অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস বলয়ের শীর্ষ নেতা। তিনি ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের একক কান্ডারি। এ ছাড়া গত আন্দোলনেও ছিলেন ফ্রন্ট লাইনের নেতা। অর্ধশতাধিক মামলার হুলিয়া নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন অ্যাডভোকেট জামান। ওদিকে, আন্দোলন সংগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া সিলেট জেলা বিএনপিকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছেন যে কয়েকজন নেতা তার মধ্যে আলী আহমদ অন্যতম। মামলায়ও বিপর্যস্ত তিনি। এরপরও মাঠ ছাড়েননি। শক্ত হাতে হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জামান ও আলীর এই লড়াইয়ে যে কোনো একজন হারলেই দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন নেতারা। আবার দুজনকে সমানভাবে সম্মান দেয়ার প্রক্রিয়াটাও হবে কঠিন। এদিকে, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান কারাবন্দি নেতা আবদুল আহাদ খান জামাল, ছাত্রদলের সাবেক তুখোড় নেতা অ্যাডভোকেট হাসান পাটওয়ারী রিপন ও জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও এম ইলিয়াস আলীর একান্তজন মইনুল হকের নাম আলোচিত হচ্ছে। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদের স্বপ্ন দেখছিলেন বর্তমান কারাবন্দি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে হারিয়েছেন মেয়রের আসন। দলীয়ভাবে তার অনুপস্থিতির কারণে সুসংহত অবস্থান নেই। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি নাসিম হোসাইন, অধ্যাপক মকসুদ আলী ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকি সভাপতি হতে লবিং চালাচ্ছেন। মহানগরে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম। কিন্তু ইলিয়াস বলয়ের শীর্ষ নেতা ও সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হতে জোরালো লবিং চালাচ্ছেন। এ ছাড়া এ পদে, সিটি কাউন্সিলর ও সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান হাবিবের নামও আলোচনায় এসেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন সাবেক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেক। তার সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে রয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক হুমায়ূন কবির শাহীনও। এ ছাড়া এমদাদ হোসেন চৌধুরী, মিফতা সিদ্দিকী, সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদীর নাম আলোচিত হচ্ছে। জেলা বিএনপির জরুরি সভা: সিলেট জেলা বিএনপির এক জরুরি সভায় ৬ই ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।কেন্দ্রীয় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে কাউন্সিলের এই তারিখ নির্ধারণ করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক আলী আহমদ। কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাতে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি