সিলেট ১১ই আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১
মো. নুরুল হক : দিনে কিংবা রাতে, নিদ্রারত অবস্হায় কিংবা বিনিদ্র অবস্হায় মানুষ নিজেকে কিংবা তার প্রিয়জনকে যে অবস্হায়, যে অবস্হানে দেখতে চায়, মনে-মনে যেভাবে ভাবে, চিন্তা করে- সেই ভাবনা, চাওয়া বা চিন্তার কল্পিত প্রকাশই হলো ‘স্বপ্ন’।
এ স্বপ্ন যে কতরূপে, কতভাবে, কত রং এ মানুষের মনের ভেতর বসতি স্হাপন করে, স্বাপ্নিকেরা সেই হিসাব কি রাখতে পারে! সাধারণতঃ দিবাস্বপ্ন সচরাচর অলীক বা অফলপ্রসূই হয়ে থাকে। ঘুমের-ঘোরে দেখা সব স্বপ্নও যে বাস্তবে রূপায়িত হয়- এমন কোনও কথা নেই। হাজারো স্বপ্নের মধ্যে মানুষ ক’টারইবা প্রতিফলন দেখতে পায়!
ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা , এমনকি- ফুটপাতের সেই গৃহহীন, বস্ত্রহীন মানুষটার কাছেও স্বপ্ন এসে ধরা দিতে কি কোনও বাঁধা আছে? যে বেশি ধনী সেও স্বপ্ন দেখে কীভাবে, কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করলে, কোন্ পথে হাটলে আরোও বেশি ধনী, সম্পদশালী হওয়া যায়। একজন রিক্সাওয়ালা, গরীব- কৃষক বাবাও স্বপ্ন দেখে- একদিন তাঁর সন্তান বড় একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট হবে। এ স্বপ্ন থাকে শিকড় থেকে শিখরে উঠার স্বপ্ন, সুখের সিঁড়ি বেয়ে উন্নতির পাহাড়চূড়ায় উঠার স্নপ্ন।এ সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়চূড়ায় উঠতে গিয়ে কারও কারও পা পিছলে গিয়ে স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।কেউবা আবার স্বপ্নের গুহাপথে আলোর নিশানা পেয়ে পরিতৃপ্ত হয়।
এই স্বপ্ন যারা দেখে, যা দেখে তার মধ্যেও কত যে বৈচিত্র বিরাজ করে! সুশান্ত পাল, সুধাংশু ভদ্র, পি কে হালদার, এস কে সূর, প্রদীপ- এরা দিবারাত্রিতে শুধু এই স্বপ্নই দেখতে থাকে- কীভাবে এদেশ থেকে হাজার-কোটি টাকা লোপাট করে ওপারে পাচার করা যায়, পাড়ি জমানো যায়। ভারতীয় যে ১১ লক্ষ নাগরিক (ডিবিসি নিউজ মতে) বাংলাদেশে চাকরি করে প্রত্যেক মাসে ১০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে- তারাও স্বপ্ন দেখে এর সংখ্যা এবং পরিমাণ কীভাবে আরও বাড়ানো যায়।সম্রাট, সাবরিনা, পাপিয়া, পাপলুরা তো স্বপ্ন দেখে, আকাম-কুকাম করে কীভাবে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা যায় এবং এত অপকর্ম করেও হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্হাপনায়, বিশেষভাবে আরামে থাকা যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী, পারমাণবিক বালিশ(!) এর উদ্ভাবক মাসুদুল আলম স্বপ্ন দেখে ১টি বালিশ উপর তলায় উঠানোর খরচ ৭০০০= টাকা(!) থেকে বাড়িয়ে আরও কতগুণ বৃদ্ধি করা যায়! পদকের সোনাচোরেরা স্বপ্ন দেখে পদকের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পদক থেকে কীভাবে সোনা চুরির পরিমাণও বৃদ্ধি করা যায়!
করোনাকালে ৯ হাসপাতালে নাকি ৩৭৫ কোটি টাকার দূর্নীতি! এ করোনাকালেও ত্রাণচোরেরা স্বপ্ন দেখে আরও অধিক পরিমাণে ত্রাণসামগ্রি চুরি করে কীভাবে গোয়াল ঘরে গর্ত খুঁড়ে মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা যায়, লুকিয়ে রাখার নতু-নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করা যায়। ফরিদপুরের হাসপাতালের পর্দাকান্ড, কিংবা কোনও এক অফিসের চামচকান্ড, বটিকান্ডে দূর্নীতির লঙ্কাকান্ড ঘটানোর রসালো স্বপ্ন দেখার কথাও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বদৌলতে জানার বাকী নেই। আর, দূর্নীতিবাজরা দূর্নীতির চরম শিখরে উঠার স্বপ্ন দেখে/ দেখতে থাকে বলেই তারা আমেরিকায় অট্টালিকা নির্মাণ কিংবা কানাডার বেগমপাড়ায় বসবাসের স্বপ্ন দেখতে পারে।
আর, ক্ষমতালোভীরা সবসময়ই এমন স্বপ্নই দেখতে থাকে, যে স্বপ্ন ক্ষমতায় আরোহণের পথ দেখাবে, ক্ষমতাকে স্হায়ী রূপ দেবার মন্ত্র শেখাবে। তা না হলেতো তাদের আরামের ঘুম হারাম হযে যাবে, মনের শান্তিও চলে যাবে নাগালের বাইরে, দূরে, বহুদূরে। আসলে এদের চেহারা, আকার-আকৃতিতে ভিন্নতা থাকলেও স্বপদেখা’র ধরণটা কিন্তু অনেকটা একই থাকে, খুব একটা বেশি হেরফের হয়না।
এ তো গেল ‘স্বপ্নদেখা’র কথা-যার কোনটা সফল হয়, আবার কোনটা হয়না। ‘স্বপ্নদেখা’ ছাড়াও ‘স্বপ্নেদেখা’ বলতেও একটা চৈতন্যবোধ, ভাবনা, কল্পনপর বিষয় আছে, যা প্রত্যেকের জীবনেই কোনওনা-কোনওভাবে অহরহ দেখা হয়ে থাকে, প্রতিভাত, প্রতিফলিত হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা একে-অপরের সাথে স্বপ্নে কতবার যে দেখা করে! একে-অপরের মনকে খুশিতে ভরিয়ে রাখার জন্যে, কাছে টানার বা পাবার জন্যে গানইতো ধরে- ‘আমি স্বপনে যে কতবার দেখেছি’। কিংবা প্রেমিকার উদ্দেশ্যে এমন প্রাণকাড়া ডায়ালগ- ‘তোমার এ রক্তরাঙা ওষ্ঠাধর, পটলচেরা চোখ, টানা-টানা ভ্রু, আর এ মদিরামত্ত যৌবন আমায় বিভোর করে দিয়েছে, আমি হারিয়ে ফেলেছি মোর আত্মসত্তা। আমি স্বপনে যে তোমায় কতবার দেখেছি!- শুনতে কোন্ প্রেমিকরই না ভালো লাগবে? বিদেশ-বিভূঁইয়ে পড়ে থাকা সন্তান বা প্রিয়জনকে কতরূপে, কতনা স্বপ্নে দেখে বাবা-মা, আপনজন!
এ স্বপ্নেদেখা অনেক সময় মনে কষ্ট ও ভয়ের রূপ নিয়ে দেখা দেয়, অন্তরকে অস্হীর করে তোলে। আবার, কখনোবা আনন্দের খোরাকও জোগায়।
স্বপ্ন, স্বপ্নদেখা, স্বপ্নেদেখা সব সময় সত্য হয়না। তবে, নবীদের স্বপ্ন কোন সময়ও অসত্য হয়না। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ)কে যেইমাত্র স্বপ্নের কথা বলেন, সাথে-সাথেই ছেলে ইসমাইল তা মেনে নিয়ে প্রফুল্লচিত্তে আল্লাহর হুকুম তামিল করতে পিতাকে বলেন। হযরত নূহ ( আঃ) যখন স্বপ্নের মাধ্যমে মহাপ্লাবনের বার্তা পান, তখনই তিনি এর প্রস্তুতি হিসেবে বিশাল নৌকা তৈরী করতে শুরু করেন। শুকনো জনপদে এমন অভূতপূর্ব কান্ড করতে দেখে নূহ (আঃ)কে পাগলও ভাবতে শুরু করে দেয় অনেকে।
‘স্বপ্ন’, ‘স্বপ্নদেখা’, ‘স্বপ্নেদেখা’- এর মধ্যে এতযে বৈচিত্র, দোষের বিচারেও এর অশুভ পরিণতিও কিন্তু কম যায়না! রাতে ঘুমের ঘোরে কাঙ্খিত সঙ্গির সংগে স্বপ্নে মিলনের ফলে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা,(!) বির্যপাত ঘটে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানেরর ভাষায় ‘স্বপ্নদোষ’ বলে। এর ফলে সংশ্লিট ব্যক্তি মন, দেহে বিরূপ প্রভাব পড়ে বৈকি! স্বপ্নে এ অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত ‘দেখা’টা অনেকটা নেচারাল হলেও দোষের নয় কি? তারপরও, স্বপ্ন আছে বলেই মানুষ টিকে আছে, বেঁচে আছে। স্বপ্নদেখা- দেখি আছে বলেই মানুষ আশান্বিত হয়। তা বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের জীবনচলাও থেমে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে জীবনের গতিপথ, মানুষের আশার-আলোও নিভে যাবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল, সিলেট প্রধান ডাকঘর।
প্রধান উপদেষ্টা বীজিত চৌধুরী
উপদেষ্টা মো: ফয়েজ আহমদ (দৌলত)
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
উপদেষ্টা মো: মুজিবুর রহমান (ডালিম)
আইন বিষয়ক উপদেষ্টা : এড. মো: রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি