সিলেট ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতগুলো থেকে উচ্ছেদের শিকার হকারদের দুই দিনের মধ্যে আবারও মানবিক দিক বিবেচনায় বসতে দিতে সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান রেখেছেন শামীম ওসমান।
তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার ও বোধবার আমি দেখবো। যদি এ সময়ের মধ্যে হকারদের বসতে অনুমতি দেয়া না হয় তাহলে পরশুদিন বৃহস্পতিবার আমি নিজে রোজা রেখে হকারদের সঙ্গে মাঠে নামবো। হকারদের বসতে দিব। দেখবো সেদিন কার কতো শক্তি, কার হাতে কতো জোর। দেখবো কারা এসব হকারদের উঠায়। শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় আমি এ আহ্বান রাখছি।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিকেলে শহরের কয়েকশ হকার মিছিল নিয়ে শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে শামীম ওসমানের কাছে গেলে তিনি হকারদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন। ওই সময়ে শামীম ওসমান শহরের চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকাতে হকারদের বিকল্প হিসেবে বসানোর কথা বললেও হকাররা স্থান সংকুলন না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সড়কের পাশেই বসার দাবি করে।
হকাররা শামীম ওসমানকে বলে, অন্তত এ রোজার সময়টাতে যেন ফুটপাতে বসতে দেয়া হয়। রোজার পর আপনি (শামীম ওসমান) যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই মেনে নিবো।
শামীম ওসমান হকারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় সিটি করপোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে অন্তত পবিত্র রমজান মাসটুকু দরিদ্র হকারদের ফুটপাত ব্যবহার করতে দিন। ঈদের আগে গরীব মানুষের পেটে লাথি মারা উচিত হয়নি। হাজার হাজার হকারের সাথে শুধু তাদের পরিবার পরিজনের জীবন জীবিকাই নয়, লাখো মধ্যবিত্তের কেনাকাটার সুযোগও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
শামীম ওসমান বলেন, আমি নিজেও ফুটপাত দখলের সমর্থন করি না, করবোও না। কিন্তু মানবিক বিষয়টি চিন্তা করে অন্তত ঈদের আগে তাদের পেটে লাথি মারা উচিত হয়নি। তাই আমি গরীব হকারদের হয়ে সিটি করপোরেশনের কাছে এই অনুরোধ করছি। দুইদিন আমি সময় দিচ্ছি। না হলে আমি নিজেই ব্যবস্থা করবো।
হকারদের শামীম ওসমান বলেন, এটা আমার দায়িত্ব না, সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করছি আবার। এ রোজাদার মানুষগুলো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। এদের পরিবার বাসায় অপেক্ষা করছে বাবা অথবা বড় ভাই সুসংবাদ দিবে কখন যে আমাদের দোকানটা বসতে দিবে। কারণ তাদের পরিবারের মা, বাবা, বউ জানে ঈদের খুশি এবার হয়তো তাদের জন্য নাই। তবে পেটের ভাতের জন্য তাদের বাবার দোকানটা বসাতে হবে। আমি আবারও বলছি আমি ফুটপাতের দোকানের পক্ষে না। আমি চাই এটা বন্ধ হোক। তবে এই ভাবে না।’
তিনি বলেন, হঠাৎ করে আসলাম, ঈদের আগে পুলিশ এসে পেটালা, সিটি করপোরেশনের দালাল আসলো। সিটি করপোরেশনের কারা দালালী করে আমি জানি। কে কে টাকা তুলে আমি শুনছি। যানজটের কারণে যদি এ হকার উচ্ছেদ করে দেয়া হয়, তাহলে এ ট্রাফিক যানজট বন্ধ হয় নাই। তার মানে ট্রাফিক যানজটের সঙ্গে হকারের কোনো সম্পর্ক নাই। আমি ধরে নিলাম ট্রাফিক যানজট হয় হকারদের কারণেই। তবে এখনো ট্রাফিক যানজট আছে। যানজটের কারণে ৫ হাজার দোকানের ৩৫ হাজার মানুষ পেটে ভাত পায় তাহলে ক্ষতি কি?
মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নবাবী দেখান উপরে বসে বসে। নবাবী দেখানো ভালো না। আল্লাহতালা নবাবী পছন্দ করে না। ৩৫ হাজার মানুষের পেট চলে এ বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে। আর ২ থেকে আড়াই লাখ মানুষ এদের থেকে জিনিস নিয়ে তাদের সংসার চালায়। ঈদের পর থেকে বন্ধ করে দেন কোনো আপত্তি নাই।
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘আজ আর কালকের দিনটা সময় দিলাম। কালকের মধ্যে সিটি করপোরেশন সমস্যা সমাধান করবে আশা করি। কালকের মধ্যে করনে, আল্লাহর ওয়াস্তে করবেন, দয়া করে করবেন, মানুষের জন্য করবেন, আল্লাহর সৃষ্টির জন্য করবেন, আশরাফুল মাখলুকাতের জন্য করবেন। আমি এমপি হয়ে সিটি করপোরেশনের কাছে ভিক্ষা চাই মানুষগুলোর পেটে ভাত দেন। যদি আগামীকালের মধ্যে না দেন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনকে আমি বলতে চাই পরশু দিন থেকে আমি নিজে মাঠে থাকবো। রোজা রেখে থাকবো। আমি রোজাদার রোজা রাখি। দরকার হলে ফুটপাতে বসে আমার এ ফুটপাতের ভাইদের সাথে ইফতার করবো এবং রাস্তা যানজট মুক্ত রাখবো।’
তিনি এও বলেন, ‘আমি কাউকে বসতে বলবো না। তবে পেটের তাগিদে যদি কেউ বসে সরকারি কর্মকর্তা কিংবা কোনো কর্মচারীর লাঠি যেন তার পিঠের কাছে না যায়। সাবধান! কারণ আমি এলাকার এমপি ও আমি জনগণের প্রতিনিধি, আমি শেখ হাসিনার কর্মী, আমি খালেদা জিয়ার কর্মী না। আমার জাতির জনক এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে।’
হকারদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান আবার বলেন, ‘ঈদের পর থেকে আমি আর আপনাদের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবো না, বলবো ঈদের আগে পর্যন্ত। আগামীকাল আমি বিশ্বাস করি প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নিবে। যদি না নেয়, আপনার যদি মনে করেন আপনাদের এখানে বসতে হবে, আপনারা বসেন আমার আপত্তি নাই। আমি নিজে থেকে যানজট মুক্ত করবো। আমি আশা করি আগামীকাল সিটি করপোরেশন নিজে এ সমস্যার সমাধান করবে। তারপরও যদি তাদের মন না গলে পরশুদিন থেকে আপনাদের পেটের তাগিদে আমি রাস্তায় বসবো। আমি সিটি করপোরেশন ও প্রশাসন সবাইকে বলছি, খবরদার গরীব মানুষের গায়ে হাত দিবেন না। গরীবের জন্য রাজনীতি করি। এদের গায়ে হাত পরার আগে ওই এলাকার এমপি হিসেবে না, ওই এলাকার মানুষ হিসেবে না, আল্লাহর একজন বান্দা হিসেবে আমি দেখতে চাই কার হাতে কতটুক শক্তি আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু আমি যদি খবর পাই কোনো দোকানদার ফুটপাতে বসে পরশুদিন কাউকে একটা টাকা চাঁদা দিয়েছেন, তখন আমার থেকে খারাপ লোক কেউ হবে না। পুলিশ লাগবে না, আমি নিজেই উঠিয়ে দিব। এক পয়সা, এক টাকা, একটা ফল, একটা আঙ্গুর কাউকে দিবেন না। ঈদ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা করবে। না হয় আমি থাকবো।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দ্রন শীল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়াত ইসলাম সানি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই শহরে ফুটপাত হকারমুক্ত করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি