সিলেট ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৬
সুরমা মেইল নিউজ : হবিগঞ্জ শহর থেকে কোরআনের হাফেজ মাদ্রসা ছাত্র আব্দুল মালেক (২৭) পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ মাস পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে তার বাবা। নিখোঁজ ব্যক্তি মাঝে মাঝে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন অপরিচিত মোবাইল ফোন থেকে আলাপ করে বলেও জানান তিনি। কোনও স্থান থেকে আলাপ করছেন তা স্ত্রীকে জানাননি কখনও।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, আব্দুল মালেক নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তার সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, পুলিশ খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিক ধারণা মতে, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে আব্দুল মালেক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানান, হবিগঞ্জ শহরের পূর্ব অন্ততপুর এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল মালেক ওরফে লিটন মিয়া ৫ বছর পূর্বে সদর উপজেলার পইল সাহেব বাড়ি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে কোরআনের হাফেজ হন। হাফিজিয়া পাস করার পর তিনি বাহুবল উপলেজলার নন্দনপুর এলাকায় বিয়ে করে হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি কোনও মসজিদ মাদ্রাসায় চাকরি না নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। তার ৩ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান এই হাফেজ। নিখোঁজের ৩ মাস পর হঠাৎ তিনি বরিশাল থেকে একটি মোবাইল ফোন ০১৭১৯৮৬৭৫৭৮ নম্বর দিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বিপদে আছেন বলে তার স্ত্রীকে জানান তবে কোনও সুনির্দিষ্ট ঠিকানা জানাননি। মাঝে মধ্যে বেশ কয়েকবার তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। কখনও ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। আবার কখনও চট্টগ্রামে কিংবা বরিশালে আছে বলে জানান।
এদিকে তার সন্ধানে তার পরিবারের লোকজন দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালিয়েও কোনও সন্ধান পায়নি। সম্প্রতি দেশব্যাপী জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় নিখোঁজ আব্দুল মালেকের পিতা আব্দুল খালেদ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, নিখোঁজ আব্দুল মালেক তার স্ত্রী আপিয়া আক্তারের সঙ্গে ঝগড়া করে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে চলে যান।
এ ব্যাপারে আব্দুল খালেক ট্রিবিউনকে জানান, আমার ছেলে ব্যবসা করার পর থেকে বেশ কয়েক লাখ টাকা ঋণ গ্রহন করে, তবে আমি আমার জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছি। কী কারণে সে বাড়ি থেকে চলে গেছে আমি জানি না। তবে তার কোনও সন্ধান পেলে আমি তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। তিনি আরও বলেন আমার ছেলে কোরআনে হাফেজ কোথাও চাকরি না পেয়ে চালের ব্যবসা শুরু করেন। হঠাৎ করে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজের আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে জগড়া করছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন তার ৩ বছরের কন্যা জান্নাত এখন তার বাবা আব্দুল মালেকের অপেক্ষায় আছে।
নিখোঁজ আব্দুল মালেকের স্ত্রী আফিয়া আক্তার জানান, নিখোঁজের ৩ মাস পর রাতে হঠাৎ একদিন ফোন করে তার সঙ্গে আলাপ করেছেন। পরিবারের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে। সর্বশেষ ঢাকা থেকে দুইমাস পূর্বে ০১৬২১৯৬৪১৪৪ নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা কয়েছে। তবে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি লাইন কেটে দেন। এর পর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে তার সঙ্গে কোনও ধরনের ঝগড়া হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। তার ধারণা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় হয়তো বাড়ি থেকে চলে গেছেন।
এলাকার বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন আব্দুল মালেক হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তবে কী কারণে সে নিখোঁজ হয়েছে এর কোনও সুনির্দিষ্ট কারন তারা জানাতে পারেননি। এলাকায় ভালো লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন মালেক, এমনটা জানান একাধিক ব্যক্তি।
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি