হল অব ফেম

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০১৫

হল অব ফেম

hall

সুরমা মেইলঃ ‘হল অব ফেম’ হলো সেই ‘জাদুঘর’ বা ‘সংগ্রহশালা’, যেখানে বিখ্যাত মানুষ ও তাদের কীর্তি স্থান পায়। ইংরেজি ‘ফেম’-এর বিপরীত শব্দ না হলেও অন্তানুপ্রাস হিসেবে ‘শেম’ শব্দটা দারুণ যায়। ‘ফেমে’ যদি জায়গা হয় বিখ্যাতদের, তাহলে ‘শেমে’ অবধারিতভাবেই আসতে হবে কুখ্যাতদের। কুখ্যাত ঘটনাগুলোও তাদে বাদ যায় না। পরশু রাতে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টি২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটকের বরাবাটি স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামেই দর্শক গ্যালারির একটি অংশের মাঠে দু’দফা বোতল ছুড়ে মারার ঘটনায় খেলা বন্ধ থাকে মোট এক ঘণ্টা। ভারতে ম্যাচ চলাকালে দর্শকদের তাণ্ডব এই প্রথম নয়, এর আগে দু’বার এমন ঘটনা ঘটেছে। দু’বারই ঘটেছে দর্শক ধারণক্ষমতায় একদা পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে এবং দু’বারই ঘটনার উপলক্ষ শচীন টেন্ডুলকারের আউট! কলকাতার সঙ্গে কটকও যোগ দিল এই হল অব শেমে! নিচে বিস্তারিত :

কলকাতা, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ :এক লাখ ১০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ইডেনে ১৩ মার্চ ওই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভারত মুখোমুখি হয় সেবারের অন্যতম সহ-আয়োজক ও পরে চ্যাম্পিয়ন হওয়া শ্রীলংকার। প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৫১ রান করলেও ভারতীয় বোলাররা শুরুটা করেছিলেন দারুণ। মাত্র ৩৫ রানে ৩ ও ৮৫ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল শ্রীলংকার। তখনকার দিনে ২৫২ রান মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং টার্গেটই ছিল। তবু ভারতের জবাবটা হচ্ছিল যথোপযুক্ত। ১ উইকেটে ৯৮ রান তোলে তারা। ওই রানেই হঠাৎ উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে সনাথ জয়সুরিয়ার বলে স্টাম্পিং হন ৮৮ বলে ৬৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলা ভারতীয় ওপেনার শচীন টেন্ডুলকার। শচীন-নির্ভর ভারত দলের এক নম্বর ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩৪.১ ওভারে ১২০ রান তুলতে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে! শুরু হয় গ্যালারি থেকে দর্শকদের তাণ্ডব। মাঠে হাজার হাজার বোতল ছুড়ে মারা হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় গ্যালারিতে। অবস্থা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড শ্রীলংকাকে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

কলকাতা, ১৯৯৯ এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ :ইডেনে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী স্বাগতিক ভারত ও পাকিস্তান। এই ম্যাচের পাঁচ দিনে মোট চার লাখ ৬৫ হাজার (প্রায়) দর্শক উপস্থিত ছিলেন, যেটা ৬৩ বছরের দর্শক ধারণক্ষমতার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল! আজও এ সংখ্যাটা ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড। প্রথম চার দিনে গড়ে এক লাখ দর্শক উপস্থিত ছিলেন মাঠে। তবে, এই খ্যাতি মিলিয়ে গিয়েছিল শেষ দুই দিনের দর্শক উচ্ছৃঙ্খলতায়। প্রথম ঘটনাটা ঘটে চতুর্থ দিন, মধ্যাহ্ন ও চা-বিরতির মাঝামাঝি সময়ে। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ১৮৫-র পর ভারত করে ২২৩ রান। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৬ রানে অলআউট হলে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৯ রান। এই ইনিংসের ৪২.২ ওভার পর্যন্ত বেশ ভালোই জবাব দিচ্ছিল স্বাগতিকরা। ৩ উইকেটে তুলে ফেলে ১৪৩ রান। ওই ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের বলে মিড উইকেটে খেলে ৩ রান নিতে গিয়ে অতিরিক্ত ফিল্ডার নাদিম খানের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে যান ৭ রানে খেলতে থাকা শচীন টেন্ডুলকার। শচীন ক্রিজে ব্যাট রাখবেন_ এমন মুহূর্তে বল ধরার জন্য তার রানিং জোনে দাঁড়িয়ে পড়েন শোয়েব আখতার। স্টাম্পে বল লাগলে পাকিস্তানিরা আবেদন করেন এবং আম্পায়ার স্টিভ বাকনার তৃতীয় আম্পায়ার কেটি ফ্রান্সিসের শরণাপন্ন হলে তিনি রানআউটের সিদ্ধান্ত দেন। ইডেনের দর্শকরা এর ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া দেখায়। এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। পরে তৎকালীন আইসিসি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া ও শচীন টেন্ডুলকার দর্শকদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানালে ম্যাচ আবার শুরু হয়। পঞ্চম দিনে ভারতের দরকার পড়ে ৬৫ রান, হাতে ৪ উইকেট। উইকেটে লোকাল হিরো সৌরভ গাঙ্গুলী ছিলেন বলেই হয়তো এদিনও প্রায় ৬৫ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। কিন্তু দিনের খেলা শুরু হওয়ার ৪ ওভারের মধ্যেই ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে ফেললে আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইডেনের গ্যালারি। গ্যালারিতে খবরের কাগজ, ফেস্টুন পোড়ানো হয় এবং বোতল, ফল, পাথর ছোড়া হয় মাঠে। এ অবস্থায় ম্যাচ রেফারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেমি স্মিথ পুরো গ্যালারি খালি করার সিদ্ধান্ত নেন। ৬৫ হাজার দর্শককে বের করতে তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। পরে, মাত্র ১০ বলের মধ্যে ভারতের শেষ উইকেটটি ফেলে দিয়ে পাকিস্তান ম্যাচটা ৪৬ রানে জিতে নেয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com