সুরমা মেইলঃ বুকে ব্যথা হলেই অনেকে আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে ছোটেন; বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হতে চান। সুস্থভাবে জীবন-যাপনের স্বার্থে এ ধরনের সচেতনতা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। তবে বুকে কোনো ধরনের ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা নিয়ে হাসপাতালে আসা লোকজনের বেশিরভাগেরই সেই ঝুঁকি থাকে না। অথচ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কত অনিশ্চিয়তার মধ্যেই না থাকতে হয় তাদের।
হার্ট অ্যটাক নির্ণয়ে তাই অধিকতর সঠিক, দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা আবিস্কারের চেষ্টা চলছিল বহুদনি ধরেই। তেমনি একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের এডিনবরা রয়্যাল হাসপাতালের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
নতুন এ পরীক্ষা পদ্ধতি বিষয়ে বৃহস্পতিবার চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়ীকী ল্যানসেটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাক নির্ণয়ে রোগির দুটি পরীক্ষা করান চিকিৎসকরা। একটি করো হয় রোগি হাসপাতালে ভর্তির পরপর। আরেকটি করা হয় প্রথম পরীক্ষার ১২ ঘণ্টা পর। পরীক্ষা দুটির ফল হতে পাওয়ার পরই হার্ট অ্যাটাক বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বর্তমানের এ পরীক্ষায় হার্টের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ থেকে নির্গত ট্রপোনিন নামক এক প্রকার রাসায়নিকের উপস্থিতি দেখা হয় মানুষের রক্তে। তবে রক্তে ট্রপোনিনের উপস্থিতি মানেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে- বিষয়টি এমন নয়। তাই নতুন এ পরীক্ষায় রক্তে ট্রপোনিনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এতে মূলত কি পরিমাণ ট্রপোনিন নির্গত হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে তা দেখা হয়। মাত্র ৩০ মিনিটের এই পরীক্ষার ফল হাতে পেলে আর ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। অনেকেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া যায়।
গবেষণাকর্মের প্রধান এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. অনুপ শাহ বলেন, ‘বিগত এক দশকে বুকের ব্যথার কারণে হার্ট অ্যটাকের আশঙ্কা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ তিন গুণ হয়েছে। বিপুল সংখ্যাক লোকজনের অনেকেরই আসলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে না। তা সত্ত্বেও হাসপাতালে তাদের তাদের উদ্বিগ্ন সময় কাটাতে হয়।’
আমাদের গবেষণায় রক্তে কি পরিমাণ ট্রপোনিনের উপস্থিতি থাকলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওই রোগির হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে তা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গবেষণাটির ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কায় হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে যাবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গবেষণা বিষয়ে যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে ১৮ হাজারের মতো লোকের হার্ট অ্যাটাক হয়; অথচ বুকের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন কয়েক লাখ।’
এরইমধ্যে ৬ হাজার ৩০৪ জন রোগির উপর পরিচালিত পরীক্ষাটি পরীক্ষাটি ৯৯ দশমিক ৬০ শূন্য শতাংশ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন সামনের দিন গুলোতে আরও ২৬ হাজার রোগির উপর এটি পরীক্ষা করে দেখতে চায়।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক (মেডিকেল) অধ্যাপক জেরেমি পিয়ারসন বলেন, ‘যে কোনো বুকের ব্যথা আসলে হার্ট অ্যাটাক কি-না তা নির্ণয়ে অধিকতর সঠিক ও দ্রুত পরীক্ষা রোগির অর্থ সাশ্রয়ে কাজে আসবে। আমরা চাই হার্ট অ্যাটাকের কোনো ঘটনাই যাতে চিকিৎসার বাইরে না থাকে। কিন্তু জরুরি না হলে লোকজনকে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অর্থের অপচয় করতে চাই না আমরা।’
‘পরীক্ষাটি পুরোপুরি চালু হলে উদ্বগ্ন হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর হার্ট অ্যটাকের ঝুঁকি নেই নিশ্চিত হয়ে বাড়ি ফেরা লোকের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘গবেষণাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগির নিরাপত্তা বিষয়ে আপোস না করেই আপনি অধিকতর সঠিকভাবে ও দ্রুত হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনার আছে কি-না তা নিশ্চিত হতে পারবেন।’
পরীক্ষাটি করার জন্য যুক্তরাজ্যে ১০ পাউন্ডেরও কম খরচ হবে; বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২০০ টাকারও কম।