৫০০তম ম্যাচ শীর্ষ পর্যায়ে মেসির বার্সালোনা

প্রকাশিত: ৩:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫

৫০০তম ম্যাচ শীর্ষ পর্যায়ে মেসির বার্সালোনা

barsalona

 

সুরমামেইল. স্পোর্টস ডেস্ক : পাঁচটা ট্রফি, বার্সেলোনার এই বছরের অর্জন। ৫০০ ম্যাচ, শীর্ষ পর্যায়ে লিওনেল মেসির ১১ বছরের মাইলফলক। বছরের শেষ ম্যাচটা জয় দিয়ে রাঙিয়ে নেওয়ার একটা তাড়না তো ছিলই, বার্সা কাল জয়ের বাড়তি প্রেরণা পেল এই দুটি বিষয় থেকেও। একদিকে এত সফল বছরটাকে সুন্দরভাবে বিদায় জানানো, অন্যদিকে ক্লাবের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়টিকে তাঁর মাইলফলক ম্যাচে কিছু উপহার দেওয়া। দুটি উপলক্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি জিনিসই দরকার ছিল—জয়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির ৫০০ তম ম্যাচটাতে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় তুলে নিল কাতালানরা।
একটা রেকর্ডও হয়ে গেছে এই জয়ে। এক পঞ্জিকা বর্ষে সর্বাধিক গোল করার স্প্যানিশ রেকর্ড। ২০১৪ সালে রিয়াল মাদ্রিদের করা ১৭৮ গোলের রেকর্ড পেছনে ফেলতে কাল বার্সার দরকার ছিল ৩ গোল। তারা করল ৪ টি। ২০১৫ সালে সব মিলিয়ে বার্সার মোট গোল হলো ১৮০ টি। কাল জয়ের ব্যবধানটা আরও বড়ই হতে পারত। এক দ্বিতীয়ার্ধেই তো মেসি, নেইমার আর দানি আলভেসের তিনটি শট ফিরে এসেছে বারে কিংবা পোস্টে লেগে।
এর পরেও যা হয়েছে বেটিস ফুটবলারদের আত্মজিজ্ঞাসার জন্যই তা-ই যথেষ্ট। প্রথম ৩০ মিনিট বেশ ভালোভাবেই লড়ছিল বেটিস। নিজেদের রক্ষণ সামলে নিচ্ছিল, সঙ্গে সুযোগ পেলে বার্সার সীমানাতেও হানা দিচ্ছিল। তবে তাদের দুর্ভাগ্য—সব প্রতিরোধ ভেঙে গেছে রেফারির জঘন্য এক ভুলে। ২৭ মিনিটে যেভাবে বার্সাকে পেনাল্টি ‘উপহার’ দিয়েছেন রেফারি, তাতে বেটিসের পাশাপাশি বার্সার সমর্থকেরাও সম্ভবত অবাক হয়েছেন। সার্জিও বুসকেটসের কাছ থেকে বাতাসে ভেসে আসা একটি পাস ধরতে গিয়ে পেনাল্টি বক্সে মেসির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বেটিস গোলরক্ষক আন্তোনিও আদানের। মাথায় আঘাত পেয়ে মেসি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন, তবে তাতে আদানের কোনো দোষ ছিল না। তিনি প্রথমে বলই ধরেছিলেন। কিন্তু রেফারি তাতেই বাজিয়ে দেন পেনাল্টির বাঁশি।
বেটিসের দুর্ভাগ্য ওখানেই যদি শেষ হতো! পেনাল্টি নিতে এসে পড়ে গিয়েছিলেন নেইমার, তাঁর শট গিয়ে লেগেছিল পোস্টে। বেটিস হয়তো ভেবেছিল, ‘যাক, প্রকৃতির ন্যায়বিচার!’ কিন্তু পর মুহূর্তেই সেই ভাবনা হয়ে গেল, ‘প্রকৃতির এ কোন ধরনের খেয়াল!’ পোস্টে লেগে বলটি ফেরত এসেছিল ঠিকই, কিন্তু বক্সে অনেক খেলোয়াড়ের ভিড়ের মধ্যে বেটিস ডিফেন্ডার হেইকো ওয়েস্টারম্যানের গায়ে লেগে বল চলে যায় জালে।
ওই গোলটির আগ পর্যন্ত ঠিক নিজেদের মতো করে গুছিয়ে খেলতে পারছিল না বার্সেলোনা। হয়তো বড়দিনের ছুটি আর ক্লাব বিশ্বকাপের ক্লান্তির রেশ রয়ে গিয়েছিল। প্রথম গোলটি পেয়ে কিছুটা নির্ভার হয়ে যেতেই বেরিয়ে এল বার্সার আসল রূপ। ৩৪ মিনিটেই এল দ্বিতীয় গোল। নেইমারের সঙ্গে দুর্দান্ত ‘ওয়ান-টু’তে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে গোল করলেন মেসি। নিজের ৫০০ তম ম্যাচটাকে রাঙিয়ে রাখলেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
বিরতি থেকে ফিরেই আবার গোল। এবার সুয়ারেজ। বুসকেটসের পাস থেকে বাঁ পায়ের শটে ৪৬ মিনিটেই ব্যবধান ৩-০ করে ফেললেন এই উরুগুইয়ান। এরপরও ম্যাচটা যে কিছুটা উপভোগ্য ছিল, তার কৃতিত্ব বেটিসকে দিতে হবে। গোল খাওয়ার ভয় ভুলে আক্রমণে উঠছিল দলটি। তবে তাতে প্রতি আক্রমণে গোল খেয়ে যাওয়ার ভয়টা সামনে চলে আসছিল। মেসি, নেইমার আর আলভেসের ওই তিনটি শট তো বারে লেগে ফিরেছেই, সঙ্গে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেটিস গোলরক্ষক আদান। তবে এত কিছুর পরেও বার্সার চতুর্থ গোলটা ঠেকানো যায়নি। অসাধারণ এক দলীয় আক্রমণ থেকে গোল করে বার্সার বড় জয় নিশ্চিত করেন সুয়ারেজ।
ম্যাচ শেষে অবশ্য এই জয়ের চেয়েও পুরো বছরের সাফল্য আর আগামী বছরের প্রতিশ্রুতির হিসেব নিকেশ চলল। মাইলফলক ম্যাচ খেলা মেসি যেমন জানালেন, এখনই ২০১৬ কে আরও বেশি সাফল্য দিয়ে ভরিয়ে রাখার কথা ভাবছে বার্সা, ‘বছরটা যেমন অসাধারণ ছিল সেভাবে শেষও করতে চেয়েছিলাম আমরা। ২০১৫ -তে যা করেছি, তার চেয়ে আরও ভালো করা বেশ কঠিনই হবে। তবে আমরা চেষ্টা করব। দলে প্রেরণার অভাব নেই।’ কোচ লুইস এনরিকেও এই বছরকে ‘দশে নয়’ দিয়ে আরও উন্নতি করার কথা বললেন।
সেই উন্নতিটা কী? আবারও ছয় শিরোপা? দেখা যাক, পেপ গার্দিওলার বার্সাকে ছুঁতে পারেন কিনা এনরিকের বার্সা।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com