জগন্নাথপুরে আইইএলটিএস পাস করলেই ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২৩

জগন্নাথপুরে আইইএলটিএস পাস করলেই ‘চুক্তিভিত্তিক বিয়ে’

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইউরোপ যাত্রার হিড়িক পড়েছে। উচ্চশিক্ষার নামে আইইএলটিএস পাস করে স্টুডেন্ট ভিসার পাশাপাশি কেয়ার ভিসাতেও তারা পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সত্যিকারের বিয়ে আবার কেউ কেউ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে (চুক্তিতে বিয়ে) ইউরোপ যাচ্ছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক যুক্তরাজ্য প্রবাসী। স্থানীয়ভাবে লন্ডন প্রবাসী হিসেবে পরিচিত। একসময় লন্ডন প্রবাসী ছেলে কিংবা মেয়েকে আত্মীয়স্বজনদের কেউ বিয়ে করে এই উপজেলার অনেকেই লন্ডন যেতেন। পরে এ ধরনের বিয়েতে বর-কনের সম্মতি না থাকায় দিন দিন হ্রাস পায় লন্ডনযাত্রা। বর্তমানে আইইএলটিএস পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন পাড়ি জমানোর চল শুরু হয়েছে। সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রীকে স্পাউস ভিসায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগকেও কাজে লাগাচ্ছেন তারা।

 

এইচএসসির পর আইইএলটিএসে নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জন করে পাড়ি দিচ্ছেন লন্ডনে। এতে কলেজের ভর্তি ফিসহ থাকা-খাওয়ার খরচ ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পড়ে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা ছাড়াও আইইএলটিএস পাস করে কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। এতে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এই ব্যয় সুরাহা করতে কেউ কেউ কন্ট্রাক্টে আবার অনেকে সত্যিকারের বিয়ে করছেন। বিয়ের সময় কনে কিংবা ছেলে পক্ষের কাছ থেকে খরচের সমুদয় টাকা নেওয়া হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইইএলটিএস পাস তরুণীকে বিয়ে করে লন্ডনে যাওয়া এক তরুণ বলেন, আইইএলটিএস কনে এখন সোনার হরিণ! কেউ তো আর চাইলেই ২০-২২ লাখে লন্ডন আসতে পারবে না। তাই আইইএলটিএস পাস করা কনেকে বিয়ে করে লন্ডনে এসেছি। এতে আমার প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক তরুণ বলেন, আমার পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল থাকায় অনেক চেষ্টা করেও লন্ডন যেতে পারছি না। তাই বিয়ে করার চিন্তা করছি। অনেকেই যোগাযোগ করছেন; বলছেন তারা কনে পক্ষ থেকে ১০-১৫ লাখ দেবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। তাই ভাবছি ২০ লাখের কনে পেলে রাজি হয়ে যাব।

 

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক নেতা বলেন, একসময় চাচাত-খালাত ভাই-বোনের মধ্যে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ের মাধ্যমে লন্ডন যেতেন। পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এ ধরনের বিয়ে এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে স্টুডেন্ট ও কেয়ার ভিসায় বিয়ের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীর লন্ডন যাওয়ার চল শুরু হয়েছে। যার ফলে আইইএলটিএস পাস বর-কনেরা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে বিবাহ করছেন। স্পাউস ভিসায় (ডিপেন্ডেন্ড) স্বামী বা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যাচ্ছেন।

 

যুক্তরাজ্যের বাংলা মিরর পত্রিকার সম্পাদক আবদুল করিম গণি বলেন, সম্প্রতি স্টুডেন্ট ও কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে অনেক তরুণ-তরুণী বিপাকে পড়েছেন। এসব ভিসায় এসে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে বেকায়দায় আছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লন্ডন থেকে পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।

 

পাসপোর্টের তথ্য যাচাইকারী ডিএসবির জগন্নাথপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন বলেন, গত দুই বছর ধরে এ উপজেলায় প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ নতুন পাসপোর্ট হচ্ছে। এরমধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই তরুণ-তরুণী এবং তারা পেশায় শিক্ষার্থী।

 

(সুরমামেইল/এসএম)


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com