ভূত-প্রেতের জন্য বরাদ্দ আজকের রাত, কী এই হ্যালোইনের ইতিহাস

প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২২

ভূত-প্রেতের জন্য বরাদ্দ আজকের রাত, কী এই হ্যালোইনের ইতিহাস

অনলাইন ডেস্ক :
হ্যালোইন শব্দটি শুনলেই অদ্ভুতুড়ে সব পোশাক, বিশাল সব মিষ্টি কুমড়া, ট্রিক অর ট্রিট ইত্যাদির কথা ঘোরে মাথায়। বিদেশি মুভি আর টিভি সিরিজের প্রভাবকে, যেগুলো নিয়মিত দেখবার কারণে হ্যালোইনের ধারণাটিকে এখন বেশ পরিচিতই মনে হয়।

 

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ দিনে মৃতদের স্মরণে ইউরোপ-আমেরিকায় পালিত হয় হ্যালোইন। এই সংস্কৃতির জন্ম ইউরোপে হলেও বিগত কয়েক বছরে এটি ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। কীভাবে শুরু হয়েছিল, দিনটি পালন? সেই ইতিহাসও বেশ মজার।

 

‘হ্যালোইন’ শব্দটি এসেছে স্কটিশ শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে। হ্যালোইন শব্দের অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। কেন দিনটিকে পবিত্র সন্ধ্যা বলা হয়, তার পেছনে রয়েছে বিরাট এক কাহিনি।

 

প্রায় দু’হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বাস করতেন সেলটিক জাতির মানুষ। হ্যালোইন উৎসব পালন শুরু করেছিলেন তারাই। সেটাও প্রায় মধ্যযুগে। তাদের সামহাইন উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইনের শুরু বলে মনে করা হয়।

 

নভেম্বরের প্রথম দিনটি তাদের নববর্ষ হিসাবে পালিত হতো। স্থানীয় ভাষায় এটিকে বলা হত ‘সাহ-উইন’। এই দিনটিকে তারা গ্রীষ্মের শেষ এবং শীতের শুরু বলে মনে করতেন। শুধু শীতের না, একই সঙ্গে অন্ধকারেরও শুরু হত এই দিনে। আর অক্টোবরের শেষ দিনটিকে অশুভ বলে মনে করা হত।

 

মনে করা হত, এই রাতে প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা আবার তাদের পুরনো জীবনে ফিরে আসতে চায়। তাদের সঙ্গে যদি কারও দেখা হয়, তবে তার ক্ষতি হতে পারে। এই বিশ্বাস থেকে মানুষ এই সন্ধ্যায় একা কাটাতেন না। রাতে আগুন জ্বেলে তার পাশে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে মন্ত্র বলতেন, নাচতেন এবং সময় কাটাতেন। নিজের বাড়িতে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্যের বাড়িতে একসঙ্গে থাকতেন। কখনো একা থাকতেন না।

 

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেল্টিক জাতির এই ‘সাহ-উইন’ উৎসবই এখনকার দিনের ‘হ্যালোইন’ উৎসব। ক্রমশ এটি ছড়িয়ে পড়েছে আরো নানা দেশেই। যেভাবে ভারতে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়, সেভাবেই পশ্চিমের সংস্কৃতিতে পালিত হয় এই হ্যালোইন।

 

বর্তমানে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে দু’টি বিষয় জুড়ে গেছে। একটি হল ‘ট্রিক অর ট্রিট’, আর আরেকটি হল জ্যাকের বাতি। এই দু’টি ঘটনা বর্তমানে হ্যালোইনের মজাকে বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে জ্যাকের বাতি হল কুমড়োর গায়ে খোদাই করে আর ভিতরটা সাফ করে সেখানে বাতি জ্বালানো। এটি হ্যালোইনের খুবই প্রচলিত একটি অন্দরসজ্জা। এখন আসল কুমড়োর বদলে নকল নানা জিনিস দিয়ে এই বাতি তৈরি করা হয়।

 

আর ‘ট্রিক অর ট্রিট’ হল শিশুদের একটি খেলা। শিশুরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে আর দরজা নক করে বলে, ‘ট্রিক অর ট্রিট’। তখন বাড়ির মানুষের দায়িত্ব, তাদের ঝুলিতে কিছু ক্যান্ডি বা খাবার দেওয়া। অনেকে বিশ্বাস করেন, অক্টোবরের ৩১ তারিখ মৃতের দেবতা সব অ‍াত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। ফলে তারা এসে ভিড় করেন পৃথিবীতে। আর সেই কারণেই এই দিনটি খুব ভয়ের বলে মনে করেন অনেকেই।

 

যদিও এখন এর সঙ্গে ভয়ের চেয়ে মজাই বেশি জড়িয়ে। এটি এমন একটি দিন, যেদিন মানুষ পরিবার-বন্ধু-আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে মজা করে সন্ধ্যা কাটান এবং ছুটি উপভোগ করেন।


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com